সোমবার 14 জুলাই 2025

lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Last Updated 2025-04-27T05:08:39Z
ব্রেকিং নিউজ

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম এর ৫৫ তম শাহাদাত পালিত


 


মোঃমাসুদ রানা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

বিয়ের মেহেদীর রঙ ম্লান হওয়ার আগেই শহীদ হন ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীরউত্তম।


বিয়ের মেহেদির রঙ ম্লান হাওয়ার আগেই ১৯৭১ এর ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির  মহালছড়িতে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগী মিজোদের সাথে প্রচন্ড সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তরুণ অকুতোভয়  বীর  মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ক্যাপ্টেন কাদের ছাড়াও তাঁর ছোট ভাই আহসানুল কাদের মামুন ও শহীদ হন  যুদ্ধে।


রবিবার রামগড়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে এ বীর শহীদের ৫৫ তম শাহাদাত বার্ষিকী। এ উপলক্ষে রবিবার সকালে শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে রামগড় কেন্দ্রীয় কবরস্থানে শহীদের কবর জিয়ারত ও  শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পরে বিদ্যালয়ে এ উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শহীদের স্মরণে খতমে কুরআন ও এতিম-দুস্থ শিশুদের ভোজের আয়োজন করা হয়।


Advertisement

৭১ এর ৫ই ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মস্থল পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ থেকে ছুটিতে নিজ বাড়ি ঢাকায় এসেছিলেন ৪০ ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসার ক্যাপ্টেন কাদের। ১৯ ফেব্রুয়ারি   বিয়ে করেন তিনি। ২৫ মার্চের কালো রাতে  নিরস্ত্র বাঙালিদের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায়  মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ২ এপ্রিল সীমান্তবর্তী মহকুমা শহর রামগড়ে এসে স্থানীয় স্বাধীনতাকামী যুব ও তরুণদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। রামগড় ও এর আশে পাশের এলাকায় বহু প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি। ২৭ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মহালছড়িতে অবস্থানকারি মুক্তিযোদ্ধরা শত্রু আক্রান্ত হন। পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগি মিজোবাহিনীর শত্রুরা ছিল দলে ভারী। পাক সৈন্যদের একটি নিয়মিত কমান্ডো কম্পানি, আর ছিল দুই ব্রিগেডে ১৫০০ মিজো সৈন্য ছিল শত্রু পক্ষে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি। এছাড়া বিমান থেকে ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলাও চালায় পাকবাহিনী। তবুও অসীম সাহসিকতা নিয়ে বীর যোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যান। এ সময় ক্যাপ্টেন কাদের ছিলেন রাঙ্গামাটি রেকিতে। রেকী শেষে মেজর শওকতের প্ল্যান অনুযায়ি ক্যাপ্টেন কাদের যোগ দেন মহালছড়ির এ অসম তুমুল যুদ্ধে। প্রতিকূলতা সত্তে ও বীরযোদ্ধারা  অসিম সাহসে শত্রুদের  প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে  শত্রুরা প্রায় চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে  মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রচন্ড যুদ্ধের এক এক মূহুর্তে শত্রুদের মেশিনগানের কয়েকটি গুলি এসে লাগে যুদ্ধরত অসীম সাহসি ক্যাপ্টেন কাদের এর বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তুমুল গুলি বৃষ্টির মধ্যে সহযোদ্ধা শওকত আলী ও ফজলুর রহমান ফারুক আহত কাদেরকে উদ্ধার করে  একটি জীপে করে রামগড়ে আনার পথে  মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এ বীর যোদ্ধা। শেষ বিকালে তাঁর মরদেহ রামগড় পৌঁছার পর কেন্দ্রিয় কবরস্তানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাঁকে। ক্যাপ্টেন কাদের এর দুঃসাহসিক অবস্থান ও ভূমিকার কারণে মেজর শওকতের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর কমপক্ষে ৫শ সদস্য নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ঐদিন রক্ষা পেয়েছিল। ঐ ভয়াবহ যুদ্ধে মিজো ব্যাটালিয়নের ৪শ সৈন্য এবং পাকবাহিনীর কমান্ডো কোম্পানীর ৪০ জনের মত সৈনিক হতাহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৪  সালে সরকার ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরকে মরণোত্তর ‘বীরউত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করেন।