Advertisement
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সারা দেশের মতো কুড়িগ্রামের ৭২টি ইউনিয়নেও বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে' হতদরিদ্রদের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় এবং সাব-ঠিকাদার জাতীয় পার্টির নেতা আমিনুর ইসলাম মাস্টারের মাধ্যমে ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নে ক্ষমতাধর দলীয় নেতাদের সাথে চুক্তিভিত্তিক অদক্ষ শ্রমিকদ্বারা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে অনিয়মের মাঝে মাত্র ১৬হাজার থেকে ১৭হাজার টাকার মধ্যে ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখিত গত ১৬জুলাই ২০২৫খ্রি. দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ও কালেরকন্ঠের উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি তামজিদ হাসান তুরাগ ৭২টি ইউনিয়নে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ করাই তা শুনে রেগে যায় জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উল্টো জেরার মুখে ফেলে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। গত ১৩সেপ্টেম্বর ২০২৫খ্রি. দৈনিক তৃণমূল পত্রিকার শিরোনামে প্রকাশিত চিলমারীতে হতদরিদ্রদের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে আর অনেক স্থানে শুধু কাগজে-কলমে কাজ দেখানো হয়েছে। কোথাও আবার কাজ শুরু হলেও ফেলে রাখা হয়েছে। চিলমারী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার সিংহ রংপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান করে এবং সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিন দিন অফিসে আসেন। তার সীমাহীন অনিয়মের কারণে ভেস্তে যেতে হয়েছে লেট্রিন নির্মাণ। রংপুর জনসাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ ইতিপূর্বে কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশল হিসাবে দীর্ঘদিন দ্বায়িত্বে ছিলেন। কুড়িগ্রামের ৭২টি ইউনিয়নে ১৬হাজার ৪৮৮টি ল্যাট্রিন প্রকল্পের কাজে একাধিকবার অনিয়মের তথ্য প্রমাণ দেয়া হলে তিনি সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগ পেলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই বিল উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামে মানব-সম্পদ উন্নয়নের লক্ষে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে এবং সাব-ঠিকাদার জাতীয় পার্টির নেতা আমিনুর ইসলাম মাস্টারের মাধ্যমে ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে অনিয়মের মাঝে মাত্র ১৬হাজার থেকে ১৭হাজার টাকায় শেষ করার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। একটি ল্যাটিন নির্মাণে বরাদ্দ ভ্যাটসহ ৩৫হাজার ১০৮টাকা। প্রতিটি ইউনিয়নে ল্যাটিন বাস্তবায়ন ২২৯টি এবং ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নে ১৬হাজার ৪৮৮টি টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণের বরাদ্দ ৫৭কোটি ৮৮লাখ ৬০হাজার ৭০৪টাকা।
সম্প্রতি, সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের গুরুতর অভিযোগে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার মধ্যে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, রাজারহাট (৫টি) উপজেলার ইউনিয়ন সমূহের সুবিধাভোগীদের বাড়িতে টুইন পিট ল্যাট্রিন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ শেষ হওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়নে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ প্রকল্পের মূল ঠিকাদার কে কমিশন দিয়ে কুড়িগ্রামের জাতীয় পার্টির নেতা ও সাব-ঠিকাদার আমিনুর ইসলাম মাস্টার সু-কৌশলে কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ এবং রংপুর জনসাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগসাজস করে প্রকল্পের বিল উত্তোলন করে আসছেন।
উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের মজিদ আলী, রহিম মিয়া, মফিজুল হক, আব্দুল গফুর বলেন, একটি ল্যাট্রিন নির্মাণে ভ্যাটসহ বাজেট ৩৫হাজার ১০৮ টাকা। একটি ল্যাট্রিন নির্মাণে কিছু ইট, ১০টি রিং, দুটি স্ল্যাব এবং চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সিমেন্টের তৈরি পিলার এবং টিনের ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও। স্থানীয় অদক্ষ শ্রমিকদ্বারা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মাত্র ১৫হাজার থেকে ১৬হাজার টাকায় দ্রুত ল্যাট্রিন নির্মাণ শেষ করেম। ল্যাট্রিন নির্মাণে সবচেয়ে নিম্নমানের রিং, সেকেন্ড-ক্লাস ইট ও সিমেন্টের ভাগ কম দিয়ে ল্যাটিন নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ের গ্রামগুলোতে ল্যাট্রিনের তালিকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ প্রতিজনের নিকট ৩/৪হাজার টাকা নিয়ে তালিকায় নাম দিয়েছেন এবং তালিকার অধিকাংশে রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম।
চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের আহাম্মদ আলী, আব্দুল জব্বার, বাচ্চু মিয়া, রমিছা বেগম, আজান আলী বলেন, ল্যাট্রিন নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে এবং ব্যবহারে অনুপযোগী। একটি ল্যাট্রিন নির্মাণে ব্যয় করেছে ১৪হাজার থেকে ১৫হাজার টাকা। স্থানীয় কিছু লোকদ্বারা ল্যাট্রিন নির্মাণে নিম্নমানের রিং, সেকেন্ড-ক্লাস ইট ও সিমেন্টের ভাগ কম দিয়ে ল্যাটিন নির্মাণ করা হয়।অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললেই কিছু রাজনৈতিক নেতার হুমকি আসে।
কুড়িগ্রামের জাতীয় পার্টির নেতা ও সাব-ঠিকাদার আমিনুর ইসলাম মাস্টারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ বলেন, অভিযোগ শুনলাম। আপনারা কি প্রকৌশলী যে কাজ বোঝেন। সাক্ষাতে কথা বলেন।
রংপুর জনসাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। তা সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেন। তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


