lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
Last Updated 2025-11-18T17:19:36Z
দুর্নীতি ও অনিয়ম

আটোয়ারীতে আঃলীগের ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নলকূপের বরাদ্দ লুটের অভিযোগ

Advertisement


 


সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে পাঁচ পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত পাঁচটি নলকূপের প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ লুটের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্যের নাম তোজাক্কারুল ইসলাম৷ তিনি উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং আটোয়ারী উপজেলা আঃলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক।


জানা যায়, গত বছরে মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মাছোয়ার পাড়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দীনের ছেলে হেলাল ইসলাম, মৃত লবাবউদ্দীনের ছেলে রবিজুল ইসলাম, মৃত সবাবউদ্দীনের ছেলে হপিজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলামের ছেলে নুরজামাল, আজিজুল হকের ছেলে মতিয়ার রহমানের নামে জেলা পরিষদ থেকে মোট পাঁচটি নলকূপ বরাদ্দ আসে। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোজাক্কারুল ইসলাম তাদের জন্য বরাদ্দকৃত নলকূপের বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা করেন৷ পরে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা গত (১২ অক্টোবর) আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।


গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ডের মাছোয়ার পাড়া গ্রামে তোজাক্কারুল ইসলাম একটি ভোটের বিনিময়ে একটি পরিবারে একটি করে নলকূপ দেন। এভাবে মোট পাঁচটি পরিবারে একটি করে নলকূপ দেন তিনি। ইউপি সদস্য হওয়ার পর জেলা পরিষদ থেকে প্রায় অর্থ শত নলকূপের বরাদ্দ আসে। ভোটের সময় মাছোয়ার পাড়া গ্রামের পাঁচ ব্যাক্তিকে নলকূপ দেওয়া ওই ব্যাক্তিদের নাম জেলা পরিষদ থেকে আসা নলকূপের তালিকায় আবারো দেন তিনি। কিন্তু তাদেরকে নলকূপ না দিয়ে তিনি সেগুলো আত্মসাতের চেষ্টা করেন। এদিকে তাদের নাম জেলা পরিষদ থেকে আসা নলকূপের তালিকায় আছে জানতে পেরে অবাক হয়ে যান তারা। তালিকায় নাম আছে জেনে নলকূপ না পাওয়ায় স্থানীয়রা গত (১২ অক্টোবর) আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। 


অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত (১১ নভেম্বর) তোজাক্কারুল ইসলাম ওই পাঁচ ব্যাক্তিকে পুনরায় একটি করে নতুন নলকূপ এবং নলকূপের নিচের লোহার অংশটা রং ও প্লাস্টার করে দেন। এবং ভোটের আগে দেওয়া নলকূপ খুলে নিয়ে আসেন। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী একটি নলকূপ স্থাপনের সময় মাটির গভীরে বোরিং, পাইপ, নলকূপের বিভিন্ন অংশ ও ইট, বালু আর সিমেন্ট দিয়ে একটি অংশ পাকা করতে হয়। একটি নলকূপের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কিন্তু ইউপি তোজাক্কারুল ইসলাম নলকূপ দেওয়ার সময় মাটির গভীরে বোরিং এবং নতুন পাইপ না দিয়ে পূর্বের বোরিংয়ের উপরে শুধু নতুন নলকূপ লাগিয়ে দিয়েছেন। নলকূপের নিচের অংশে থাকা লোহার পাইটটিও সাদা রং করে দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে সেটা পুরোনো লোহার পাইপ ছিল। 

স্থানীয় হেলাল জানান, তোজাক্কারুল ইসলাম নির্বাচের আগে আমাদেরকে একটি করে নলকূপ দেয় যেন আমরা তাকে ভোট দেই। ভোটও দিয়েছি এবং সে মেম্বারও হয়েছে৷ কিছুদিন আগে আমরা জানতে পারি যে সে নাকি আমাদের নামে কয়েকটি নলকূপ নিয়েছে কিন্তু আমরা সেটা জানতাম না৷ এবং ওই নতুন নলকূপগুলোও আমরা তখন পাইনি৷ এই জন্য ইউএনও অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগ করার মাস খানেক পর তোজাক্কারুল মেম্বার আমাদের পুরনো নলকূপ খুলে নিয়ে শুধু একটি নতুন নলকূপ আর মেঝেটা পাকা করে দেয়৷ মাটিতে পাইপের বোরিং করেনি। নতুন পাইপও দেয়নি। শুধু আমাদের করা বোরিংয়ে একটি নতুন নলকূপ লাগিয়ে দিয়েছেন। 


এনিয়ে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোজাক্কারুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি নির্বাচনের আগে আমার ব্যাক্তিগত অর্থায়নে অনেকগুলো নলকূপ দিয়েছিলাম। জেলা পরিষদ থেকে আসা কোনো নলকূপ আমি কারো নামে বরাদ্দ নিয়ে আসিনি। যে নলকূপগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। আমি শুধু তালিকা দিয়েছিলাম। আর কাজ তো আমি করিনি, কাজ করেছে ঠিকাদার। তাদের তো নলকূপ ছিল'ই তারপরও তাদেরকে পুনরায় কেন নলকূপ দেওয়া হলো এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি দিয়েছি৷ আমার ইচ্ছে মতো যাকে ইচ্ছা তাকে নলকূপ দিতে পারি৷ আর নলকূপ স্থাপনের অনিয়মের বিষয়ে তিনি সব দোষ ঠিকাদারের বলে সাফ জানিয়ে দেন। 

এবিষয়ে মির্জাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ আজাদ নিশ্চিত করে বলেন, জেলা পরিষদ থেকে আসা নলকূপের কাজ আমি করিনি৷ আমার মাধ্যমেও কাউকে নলকূপ দেওয়া হয়নি৷ তোজাক্কারুল ইসলাম যদি কাউকে কোনো নলকূপ দিয়ে থাকে তাহলে সে-ই বিষয়েও আমি অবগত নই।