এইচ এম রাসেল, বরগুনা প্রতিবেদক:
ঘুর্ণিঝড় শক্তি ও পুর্ণিমার জোর প্রভাবে গত তিন দিনের অতিবর্ষণে আমতলী উপজেলার জন-জীবন বিপর্যস্থ হয়ে পরেছে। সারা দিন সুয্যের দেখা মিলেনি। পানিতে তলিয়ে গেছে আউশের ধানের বীজতলা, মাছের ঘের ও পানের বরজ। পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্র পানিতে থই থই করছে। পৌর শহরে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। ঘর-বাড়ী পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পরেছে পৌরবাসী। বৃহস্পতিবার পায়না নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়া পায়রা নদীর আমতলী-পুরাঘাটা ফেরিঘাট গ্যাংওয়ে তলিয়ে ৩ ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
জানাগেছে, গত তিন দিনে আমতলীতে ১১৯.৫৮ মিমি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী উপজেলার অধিকাংশ আউশ ধানের বীজতলা, মাছের ও পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। পুর্ণিমার জোর প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপদ সীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে জানান গেইজ রিডার আবুল কালাম আজাদ। এতে আমতলী-পুরাঘাটা ফেরি গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরিতে গাড়ী ওঠা-নামা করতে পারেনি। ফলে বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানান ইজারাদার সিদ্দিকুর রহমান। চাষীরা ঘেরের পাড়ে জাল দিয়ে মাছ আটকে রেখেছেন। অপর দিকে জলকপাট দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন না হওয়ায় উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পৌর শহরে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। এতে ঘর-বাড়ী পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পরেছে পৌরবাসী। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতায় আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন রোড-ঘাট তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মফিজ উদ্দিন বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমতলী সরকারী কলেজ, বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, আমতলী বন্দর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোন্তাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার সর্বত্র আউশ ধানের বীজতলা, পানের বরজ ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
Advertisement
হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের শিবলী শরীফ বলেন, পানিতে মাঠ-ঘাট থৈ থৈ করছে। আউশ ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে বীজতলা পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুকুর তলিয়ে গেছে। পুকুর পাড়ে জাল দিয়ে আটকিয়ে রেখেছি। যাতে মাছ নেমে যেতে না পারে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, জলকপাট দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আমতলী মফিজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির বলেন, বিদ্যালয় মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের কোয়াটার তলিয়ে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। ঘরের মধ্যে পানি থইথই করছে। তিনি আরো বলেন, পৌর শহরে চরম জলাবদ্ধতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার দাবী জানান তিনি।
আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোছাঃ ফেরদৌসি আক্তার বলেন, পানি কলেজ ভবনের বারান্দা গড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এতে ক্লাসে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পানি নিস্কাশনের দাবী জানান তিনি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ রাসেল বলেন, আউশ ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেলেও দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে সবজির ক্ষেতে কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর প্রশাসক মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, আমি পৌর শহরের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকা ঘুরে দেখেছি। তাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, দ্রুত যাতে পানি নিস্কাশন হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।