Advertisement
সালাম মুর্শেদী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ৩টা বেজে ১৫ মিনিট। বিদ্যালয়ের সব কয়টি কক্ষের দরজা জানালা খোলা। বাহির থেকে দেখে বোঝার কোনো অবকাশ নেই যে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। ভিতরে গিয়ে দেখা যায় পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে ২, তৃতীয়তে ৪ এবং চতুর্থ শ্রেণিতে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থী।
এ চিত্র পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ঝলঝলি পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে ওই চিত্র দেখা যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন ঝাঁ জানান, 'বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৩১ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৬ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৭ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৭ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৭ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থী।
তিনি আরো জানান, আমাদের স্কুলের আশেপাশে কোনো গ্রাম নাই। স্কুল থেকে গ্রাম একটু দূরে। স্কুলে আসার মতো ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা নাই। এছাড়াও গ্রামের কাছাকাছি বা যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো সেখানেই অভিভাবকরা বাচ্চাদের ভর্তি করাচ্ছে'।
আটোয়ারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১১২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১১২ টি প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৮২০ জন। ১১২ টির মধ্যে ৭৮ টি প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনেরও কম শিক্ষার্থী রয়েছে। আর ১ টি প্রতিষ্ঠানে ৩০ জনের কম শিক্ষার্থী রয়েছে।
এছাড়াও আটোয়ারী উপজেলায় ৩৬ টি কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে পাঠদানের অনুমতি প্রাপ্ত কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ১৩ টি। যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। উপজেলায় কর্মরত প্রধান শিক্ষক ৭৪ জন। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ ৩৮ টি। এসব বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ৪৯৭ জন এবং শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৫৫ টি।
জানা যায়, আটোয়ারী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীর পরিমাণ কমছে। প্রাথমিকে ভর্তি হতে আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে অভিভাবকরা বলছেন, প্রাথমিকে পড়ালেখার মান ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, যেকোনো বাজার বা রাস্তার পাশের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং উপস্থিতি তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকলেও গ্রাম ও সীমান্তবর্তী স্কুলগুলোতে এর সংখ্যা খুবই কম। এছাড়াও অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সংকট তো রয়েছেই। এতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।
অভিভাবকরা বলছেন, বেসরকারি বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে, তার তুলনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক পিছিয়ে। কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পাঠ্য বইয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হয় যেটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হয়না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের গুণগত মান আগের মতোই। তারা শিক্ষার্থীদের নতুন করে কিছু দিতে পারছেন না। সরকারি শিক্ষকদের মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের উপকার হতো বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাসুদ হাসান বলেন, 'আটোয়ারী উপজেলা সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। এখানে শিক্ষার মান তুলনামূলক ভাবে কম। বেশির ভাগ অভিভাবক কৃষক। কৃষি কাজের সাথে তাদের সন্তানরাও জড়িত থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। তবে পরীক্ষার সময় কিছুটা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য অভিভাবকদের আরও সচেতন হবে। আমরা প্রতিমাসে অভিভাবক সমাবেশ করছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের সচেতনতা প্রয়োজন'।