Advertisement
সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিরোধ, অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল সিদ্ধান্ত এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিরোধে জনসচেতনতা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মোঃ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফুজ্জামান।
এসময় উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক অফিসার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: অফিসার ডা মোঃ হুমায়ুন কবির, ডাংগীরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দীন, আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. কুদ্দুস, তোড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যলায়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ উপজেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফল প্রকাশ হবে। ফল প্রকাশের পর অনেক পরীক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না হওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত পথ বা ভুল সিদ্ধান্ত বেছে নেয়। যার ফলে তার ও পরিবারের উপর নেমে আসতে পারে ঘোর অন্ধকার। সামান্য একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভবিষ্যতের সুন্দর একটি জীবন। বলা যায় আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে পুনরায় জীবনকে গোছানোর আরো একটি নতুন ধাপ অপেক্ষা করছে। যেই ধাপে রয়েছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবার অগণিত স্বপ্ন। সামান্য একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সেই স্বপ্নীল স্বপ্ন গুলো নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত পথ বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভাবতে হবে তার ভবিষ্যৎ জীবনে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে এবং তার পরিবার তাকে নিয়ে কি স্বপ্ন বুনেছিল। তাই কোনো ভুল সিদ্ধান্তের পথ বেছে না নিয়েও আরো কঠোর মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যায় নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের পথ ছাড়াও তাদের সামনে একটি সুন্দর পৃথিবী অপেক্ষা করছে। সেই লক্ষ্যে অবিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস, সচেতনতা তৈরি ও আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিরোধে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এসময় বক্তব্যরা বলেন, আত্মহত্যার পেছনে মানসিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সহ একাধিক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো: পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট না হওয়ায় বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত সমস্যা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত চাপ, পারিবারিক বা সম্পর্কজনিত সমস্যা, আর্থিক সংকট, একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আঘাতমূলক অভিজ্ঞতা, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন, প্রিয়জন আত্মীয় স্বজন বা পারিবারের কাছ থেকে পাওয়া আঘাত।
এছাড়াও বক্তব্যরা বলেন, কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যার চিন্তা করছেন কিনা, তা বোঝার জন্য কিছু সাধারণ লক্ষণ বোঝা যায়। এরমধ্যে একাকীত্ব বেছে নেওয়া, স্বাভাবিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা, প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া, হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিতভাবে শান্ত হয়ে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি হতাশা বা দুঃখবোধ কাজ করা। পরিবার বা স্বজনদের কাছে তীব্র অপরাধবোধ বা মূল্যহীনতা অনুভব করাও এর কারণ হতে পারে।
এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরীক্ষার্থীদের মনে নানা কথা বা উদ্বেগ ঘটতে পারে। তারা আত্মহত্যার ইঙ্গিতমূলক কথা বলা, যেমন 'আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারলাম না বেঁচে থেকে কী লাভ?’, ‘আমার মরে যাওয়া উচিত’, ঘুমের ওষুধ বা বিষাক্ত কিছু সংগ্রহ করা সহ বিভিন্ন ইঙ্গিত তাদের মধ্যে লক্ষ করা যেতে পারে।
এছাড়াও আগামীকাল এসএসসির রেজাল্ট প্রকাশের পর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নানা উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর আগে উপজেলার চুচুলী বটলতী হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র বর্মনের অকাল মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।