lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
Last Updated 2025-07-30T17:21:27Z
জাতীয়

প্রতিবন্ধীসহ দুই শিক্ষার্থীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী

Advertisement


 


সালাম মুর্শেদী, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে স্কুলের টিফিন চলাকালীন ফুটবল খেলার সময় বাড়ির টিনের বেড়ায় বল লাগায় বাক প্রতিবন্ধী সহ আরেক শিক্ষার্থীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী'র বিরুদ্ধে। ওই দুই শিক্ষার্থীর হাত ও পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। যা সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।


এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দ্বেবীদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী চয়ন ও বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাসুমের সাথে। চয়ন দ্বেবীদ্বার গ্রামের জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণের ছেলে আর বাক প্রতিবন্ধী মাসুম একই গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে। 


গত সোমবার (২৮ জুলাই) স্কুলের টিফিন চলাকালীন ফুটবল খেলার সময় স্কুল মাঠের পাশের এক বাড়ির টিনের বেড়ায় বল লাগায় ওই অমানবিক ঘটনাটি ঘটান ওই স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী। 



জানা যায়, দ্বেবীদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ওই গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত। তাই স্কুল মাঠের পরিসরও কিছুটা কম। মাঠের পশ্চিম পাশে কালমেঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রীতম চন্দ্র (কালিদাস) এর বাড়ি৷ ঘটনার দিন স্কুলের টিফিনের সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ফুটবল খেলছিল। খেলার এক পর্যায়ে বলটি ওই স্কুল শিক্ষক কালিদাসের বাড়ির টিনের বেড়ায় লাগে। পরে তার স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাসুদ ও চয়নকে বাড়ির ভিতরে ধরে নিয়ে যান। বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পর গরু বাধার দড়ি দিয়ে তাদের হাত-পা বেঁধে রাখেন। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য অন্য শিক্ষার্থীরা আসলেও তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তিনি। পরে স্কুলের এক শিক্ষক আসলেও তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি৷ তিনি বলেন যে, তাদের অবিভাবকরা না আসলে ছেড়ে দেওয়া হবেনা৷ পরে চয়ন ও মাসুমের মা-বাবা আসলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটোয়ারী থানা পুলিশ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। পরে সমাধানের জন্য বলরামপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও   ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়রা বসতে চাইলে থানা পুলিশ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের লোকজন চলে আসেন। এরপর শিক্ষার্থীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী জনসম্মুখে সবার কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু সেটাতে রাজি না হয়ে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থাতেই রয়ে যায়। 



ভুক্তভোগী তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী চয়ন বলেন, 'টিফিনের সময় আমরা ফুটবল খেলছিলাম। খেলার সময় ফুটবলটা ওদের বাড়ির টিনের বেড়ায় লাগে। আমি আর মাসুম ওই বেড়ার কাছে ছিলাম। তখন উনি বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আমাকে আর মাসুমকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। তারপর আমাদের হাত-পা গরু বাধার দড়ি দিয়ে গাছের কাছে বেঁধে রাখে। স্কুলের ম্যাডাম আনতে আসলেও আমাদেরকে ছেড়ে দেয়নি। পরে আমার মা-বাবা এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে'। 



স্কুল শিক্ষক পুরংজয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'টিফিনের সময় আমি স্কুলের বিদ্যুৎ বিল দিতে যাই। তখন স্কুলের এক ম্যাডাম আমাকে ফোন করে বলে যে ওই দুই শিক্ষার্থীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল দিয়ে এসে দেখি শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। তবে তাদের দু'জনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগটি সত্য'। 



স্থানীয় ইউপি সদস্য খায়রুল বলেন, ওইদিন যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক এবং অমানবিক। আমরা বিষয়টি সমাধান বসলে ওই মহিলা জনসম্মুখে তাদের কাছে মাফ চায়৷ কিন্তু আরেক পক্ষ তার বিচারের দাবিতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারপর বিষয়টি ঘোলাটে হয়ে পরলে অমীমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়৷ এবং আমাকেও অপমানিত করা হয়েছে। 



এবিষয়ে জানতে গেলে শিক্ষার্থীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ওই স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী বলেন, ওইদিন আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। আমার শরীরে প্রচুর জ্বর ছিল। আমি বিছানা সুয়ে ছিলাম। বাচ্চারা বাইরে খুব চিল্লাচিল্লি করছিল। তাঁরা আমাদের ঘরের উপরে আম গাছে ঢিল নিক্ষেপ করছিল। আর সেই ঢিল গুলো আমাদের ঘরের টিনের উপরে পড়ছিল। আমি তাদেরকে জানালা দিয়ে কয়েকবার নিষেধ করেছি,  বলেছিল যে পূর্ব দিকে গিয়ে খেলতে৷ কিন্তু তাঁরা আরো বেশি দুষ্টামি করছিল। তাই তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে এসে ভয় দেখিয়েছিলাম কিন্তু দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখিনি৷ 



আটোয়ারী উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল মানিক চৌধুরী জানান, আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার সত্যতা আমরা পেয়েছি। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। ওই মহিলা জনসম্মুখে সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। পরে একটি পক্ষ সেই বিচারকে অস্বীকার করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা চলে আসি। তবে এঘটনায় স্কুলের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা সেই বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।