lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ৪ মে, ২০২৫
Last Updated 2025-05-04T10:16:39Z
রাজনীতি

কোনো দেশপ্রেমিক ভালো মানুষ আওয়ামী লীগ করতে পারে না: এম নাসের রহমান

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র এম নাসের রহসান বলেন, 'প্রায় নয় মাস আগে দেশে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। যার মাধ্যমে সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক ডাইনি খুনী হাসিনার পতন হয়েছে। আজকে আমরা  ভারতের কব্জা হতে স্বাধীন ও মুক্তি প্রাপ্ত। স্বাধীন বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছি আমরা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আর ২০২৪ সালে ভারতের প্রচ্ছন্ন কব্জা থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি। হাসিনার শেষ দিন পর্যন্ত ভারতের সম্পূর্ণ আধিপত্য ছিলো। ভারতের এই আধিপত্যবাদ উপড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে জুলাইয়ের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে। সেই সাথে রেজিম হাসিনার পতনের মাধ্যমে আরেকটি পতন হয়েছে একটা যে ফ্যাসিস্ট দল ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দলেরও পতন হয়েছে। আওয়ামী লীগ আছে কী এখন দেশে? আওয়ামী লীগ কী আবার ফেরত আসতে চান?' শনিবার (৩ মে) বিকেলে কাগাবালাবাজারে  মৌলভীবাজার  সদর উপজেলার ৪ নম্বর আপার কাগাবালা ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দলীয় নেতাকর্মী ও উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্য তিনি বলেন, 'গুন্ডা পার্টি, বাটপার পার্টি, দেশের সম্পদ লুটেরর পার্টির নাম কী? সেটার নাম হলো আওয়ামী লীগ। যতো গুন্ডা, বাটপার জনগণের সম্পদ লুটপাটকারির দল হল আওয়ামী লীগ। কোনো দেশপ্রেমিক ভালো মানুষ আওয়ামী লীগ করতে পারে না। এরা নাই। দুষ্কর্ম্মের কারণে এরা বিলীন। এরা গণদুশমনের দলে পরিণতি হয়েছে। কোন ভদ্রলোক, ভালো মানুষ আওয়ামী লীগ করার প্রশ্নই উঠে না। যে দলের নেতারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, সে দল বাংলাদেশের দল নয়। যে দলের নেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে পুরো গোষ্ঠী সাথে নিয়ে পালিয়ে গেছে এটা কোন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক দল হতে পারে না। ওই দলের নেত্রী বলতেন তারা হলো স্বাধীনতার চেতনার কান্ডারী। নেতা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। তার দুই মেয়ে নাতীপুতি সব কোথায়? একজনও দেশের ভেতরে নাই। এমনকি তাদের কেউ বাংলাদেশের নাগরিকও নয়। অথচ এরাই এদেশের মানুষকে নিয়ে দুই নম্বরি রাজনীতি করে দেশটাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে পলায়ন করেছে। তাই এখন সময় এসেছে দেশের মানুষের আত্মোপলব্ধি করার। যে আমরা আগামীতে কি করবো। কোন পথে হাঁটবো। তবে এটা ঠিক একটা দেশে দুইটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল না থাকলে রাজনীতি হয় না। হাসিনার দুঃশাসনের কারনেই এখন আওয়ামী লীগতো গর্তের তলে পড়ে গেছে। তাদের আগামী নির্বাচনে আর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। আর আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ  আসেও কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কোনো স্বৈরাচারী গণহত্যাকারী  দলকে ভোট দিবে না।'

নাসের রহমান বলেন, 'দেখবেন একটা দলের নেতা  বিরাট বিরাট বয়ান করে বেড়ান। আজকে এই কথা তো কালকে ওই কথা। মনে হয় যেন মানুষরে এমন এমন নসিহত দিয়ে যাচ্ছেন যার শেষ নাই। এরা ক্ষমতায় এলে দেশটা ধবংস করে দেবে। সেজন্য জাতীয় নির্বাচন আগে না স্থানীয়  নির্বাচন আগে এ নিয়ে নানান কথা বলছে। একটা দেশে জনগণের সুখ দুঃখের চাওয়া পাওয়ার কথা শুনতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই। এ দেশের মানুষ বিগত সাড়ে পনের বছর ভোট দিতে পারেনি। দিনের ভোট রাতে করে আমি তুমি ডামির নির্বাচন করে অবৈধভাবে হাসিনা দেশের জনগণকে ভোট থেকে বঞ্চিত করে রাস্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। তাই দেশবাসী চান দ্রুত নির্বাচন। তারা তাদের পছন্দের সরকার গঠন করবে। বিএনপিও চায় আগামী ডিসেম্বরে পৌষ মাসের ভিতরে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হতে। এদেশের মানুষকে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই এতো প্রাণ দিতে হয়েছে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গুম, হত্যার শিকার হয়েছে।'

নাসের রহমান বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির সম্পদ নয়, গোটা দেশের সম্পদ। ধরুন আজ যদি দেশে রাস্ট্রপতির নির্বাচন হয়, আর তিনি যদি নির্বাচনে দাঁড়ান ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ বেগম জিয়াকে ভোট দিবে। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় কেউ নেই। তিনি এতবড় একটা সম্পদ আমাদের দলের। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করে আমাদের সকলে দোয়া করতে হবে।'

নাসের রহমান বলেন, 'বেগম জিয়া দেশে আসার পরপরই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয়ে যাবে। এখন নির্বাচনের কথা বললেই ফেইসবুক বুকে একটা শিক্ষিত  সমাজ এরা নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলে। একেবারে একাট্টা। আরও হাস্যকর কথা বলে ডক্টর ইউনুসকে ক্ষমতায় পাঁচ বছর থাকতে। আচ্ছা এটা কি হয়? একটা গণতন্ত্রের দেশের ভেতরে নির্বাচন ছাড়া কীভাবে পাঁচবছর থাকার দাবি তুলেন? তার মনে করেন, আওয়ামী লীগ চলে গেছে,  বিএনপির আসলে মনে হয় দেশের একই চেহারা আবার ফিরে আসবে?'

তিনি বলেন, 'অন্তর্বতীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ মেয়াদ এক থেকে দেড় বছর হতে পারে। আসলে এর বেশি না। মূলত: অন্তর্বতীকালীন সরকার তিন থেকে ছয়মাসের হয়ে থাকে। আর এখন ফেসবুকে একটি গোষ্ঠী ডক্টর ইউনুস পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে ফেসবুকে ভোট নিচ্ছে। আচ্ছা, এখন দেশের ইলেকশন কি ফেসবুকে চলে গেছে? দেখে মনে হয়, আগামী ইলেকশনে দেশের মানুষ ভোট সেন্টারে যেতে হবে না। ফেসবুক খুলেই ভোট করে ফেলবে, যে আপনাদের ভোট হয়ে গেছে। এই শিক্ষিত একটা অংশ এসব করছে। তাদের জন্য দুঃখ হয়। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি ভোটার। এই ১২ কোটি মানুষ কি ফেসবুক চালান? এর জন্য বলছি, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনার দু:শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। নতুন প্রত্যয় ও বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যাশা নিয়ে সর্বক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াবে প্রিয় বাংলাদেশ।'

তিনি বলেন, 'হাসিনার অবৈধ নির্দেশে চৌদ্দশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ চৌদ্দশ মানুষ হত্যার দায়ে তার চৌদ্দশবার ফাঁসি হতে হবে। শুধু এই জুলাই অভ্যুত্থানে  বিশ হাজার মানুষ আহত হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, বিকলাঙ্গ হয়েছে। হাসিনাকে ইন্ডিয়া থেকে এনে  জেল খানার ফাঁসির দঁড়িতে নয়, বায়তুল মোকাররমের সামনে শোলের দঁড়িতে ঝোলাতে হবে। এ গণহত্যাকারি ক্ষমতা লিপ্সু খুনি হাসিনার ফাঁসি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে দিতে হবে। আর এজন্য দেশবাসী তার বিচার দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন।'

কাগাবালা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ডা. আব্দুল আছাদের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহবায়ক কবির উদ্দিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মুকিত, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য বকসি মিসবাউর রহমান, মো. ফখরুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান মজনু, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়াছ আহমদ ও সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মারুফ আহমেদ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোহিত ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান সোহানসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

এর আগে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিগণকে সাথে নিয়ে  সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব মো. বদরুল আলম। 

দীর্ঘ সতের বছর পর স্থানীয় বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। সরাসরি গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সস্পাদক পদে তাদের পছন্দের নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন। কাউন্সিলে মোট ভোটার ছিলেন ৪৫৯ জন। কাস্ট হয় ৪৪১টি। সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন মোট  চার জন। সাধারণ সম্পাদক পদে দুই জন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে ২২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আকতার হোসেন দলা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আব্দুল মতিন প্রাপ্ত ভোট ১৪৩টি, আবুল কালাম আজাদ পান ৬২টি ভোট, মালিক মিয়া পান মাত্র ২ ভোট। বাতিল ভোট সাতটি। সাধারণ সম্পাদক পদে মোস্তাফিজুর রহমান ২৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শামসুল ইসলাম পান ১৮০ ভোট। বাতিল ভোট ১০টি। দুটি বুথে বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। 

ভোট গ্রহণ  করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান মজনু ও বিএনপি নেতা আয়াছ আহমদ। তাদের সহযোগীতা করেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান, কাজল মাহমুদ, শেরওয়ান আহমদ ও মিলাদ হোসেন।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির স্থায়ী যুগ্ম আহবায়ক মারুফ আহমেদ জানান, কাগাবালা ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলের মাধ্যমে সদর উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়নের ১৩টি ইউনিটের সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্মেলন ও গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সমাপ্তি হয়।