Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উপজেলার ৪ নম্বর পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সুবিস্তৃত কাউয়াদিঘি হাওরের পূর্বপাশে অবস্থিত রক্তা গ্রাম। হাওর বধৌত নিভৃত এ গ্রামটি রাজনগরের একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ। এ গ্রামেই রয়েছে এ অঞ্চলের প্রাচীন এক মসজিদ। যার নাম রক্তা জামে মসজিদ। স্থানীয়দের কাছে মসজিদটি তিন গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে চুন-সুরকি দিয়ে। সাম্প্রতিককালে মসজিদটিতে নামাজে মুসল্লিদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় স্থানীদের প্রচেষ্টায় আদি কালের মসজিদটি হুবহু একই কাঠামোতে রেখে পূর্বদিকে তা অনেকটা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
সরজমিনে রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক ধরে রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে ৪ নম্বর পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সুবিস্তৃত কাউয়াদিঘি হাওরের পূর্বপাশে অবস্থিত রক্তা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চুন-সুরকি দিয়ে তৈরিকৃত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিকে প্রাচীন স্থাপত্যকলা অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদটির তিনটি গম্বজের মধ্যে মাঝের বড় গম্বুজটি রঙ করা হলেও বাকি দুই পাশের দুই ছোট গম্বুজ ও পুরো মসজিদটির দেয়াল সেই প্রাচীন কালেরই রয়ে গেছে। এগুলো রঙ করা হয়নি। প্রাচীন মসজিদটির চারপাশের দেয়ালগুলো ৩ ফুট প্রস্থ। মিম্বরের উপরে, পাশে ও ছাদে অনন্য সাধারণ কারুকাজ করা। নতুন সম্প্রসারণ করা মসজিদের উচ্চতার চেয়ে প্রাচীন মসজিদটির উচ্চতা কিছুটা বেশি। পুরাতন মসজিদটির উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে জানালা রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দিকে পুকুর ও পশ্চিম দিকে একটি মজা (পরিত্যক্ত) পুকুর রয়েছে। মসজিদটির ঠিক উত্তর পাশে রক্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর দক্ষিণ পাশে নতুন একটি বাড়ি। যে কারনে মসজিদটি দুটি ভবনের মাঝে অবস্থিত বিধায় দুর থেকে দেখা যায় না।
প্রাচীন রক্তা জামে মসজিদটির দাতা পরিবারের সদস্য শাহজাহান মাহমুদ (৭০) বলেন, ‘রক্তা গ্রামের এই প্রাচীন মসজিদটির বয়স দেড় শতাধিক বছর। আমার দাদা হাজী সুজন মাহমুদ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদে প্রবেশের সিড়িতে আমার ছোট চাচার পায়ের ছাপ রয়েছে। মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয় তখন এলাকায় খুব বেশি মানুষের বসবাস ছিল না। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির দুরত্বও ছিল অনেক। স্থানীয়দের নামাজের জন্য কোন মসজিদ সে সময়ে ছিল না। আমার দাদা নিজের উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এক সময় ধীরে ধীরে আমাদের গ্রামে পরিবার ও লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সাথে বৃদ্ধি পায় মুসল্লির সংখ্যাও। প্রতি সপ্তাহে জুমআর নামাজ, ঈদের জামাতে এ মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হবার কারনে প্রাচীন আমলের মসজিদটির কাঠামো হুবহু অক্ষুন্ন রেখেই পূর্বদিকে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে নতুন ভবন সম্প্রসারণ করা হলেও যেহেতু এলাকায় ঈদগাহ নেই সেহেতু এ মসজিদেই দুইবারে এলাকাবাসী ঈদ নামাজ আদায় করা হয়।’
মসজিদটির ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। আমি ছোটবেলা থেকেই এ মসজিদ সম্পর্কে জানি। গত ৮ বছর যাবত এখানে ইমামতি করছি। আমি আসার পর থেকে দেখছি প্রায়ই দেশির বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন মসজিদটি দেখতে আসছেন। ঐতিহাসিক চুন-সুরকির তৈরি এ মসজিদটি শুধু রক্তা গ্রামই নয়, এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন একটি মসজিদ। এটি সংরক্ষণে এলাকাবাসী খুবই আন্তরিক। মসজিদটির উন্নয়নে এলাকাবাসী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’