Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
চর্মজনিত একটি রোগের নাম হলো ‘স্ক্যাবিস’। এ রোগটি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। শরীরে চুলকানি ও গুটি গুটি লাল র্যাশ নিয়ে অনেককেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বির্হবিভাগে প্রতিদিন গড়ে অর্ধ শতাধিক স্ক্যাবিস রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ক্যাবিস একটি চর্মজনিত রোগ। এতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হল শরীরে চুলকানি, গুটি গুটি র্যাশ ও গোল চাকার মতো হয়ে থাকা। রোগটির শুরুর দিকে শরীরের কোন কোন অংশে লাল ছোপ ছোপ এলার্জির মনে হতে পারে। প্রথমবার সংক্রমণে একজন ব্যক্তির সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। দ্বিতীয় সংক্রমণের লক্ষণগুলি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হতে পারে। এই উপসর্গগুলি হাতের কব্জি, আঙ্গুলের মাঝে, কোমরের জোড়া বা আশেপাশে হতে পারে। রাতের বেলা চুলকানির তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। স্ক্যাবিস চর্মরোগ সংক্রমন জনিত রোগ হলেও চিকিৎসা অবহেলায় তা প্রাণঘাতি হয়ে দেখা দিতে পারে।
বুধবার (৭ মে) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে অর্ধ শতাধিক স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। চর্মরোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে আসা রোগীদের চিকিৎসাপত্র দেয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে কোন রোগী ভর্তি নেই বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেমকো) রিপন। তিনি জানান, চুলকানির জীবাণু থেকে সংক্রমিত হয়ে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য ঢালাও বিছানা পরিত্যাগ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান ও আক্রান্ত হবার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপজেলার মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা রুহিন ইসলাম বলেন, ‘আমি একটি মাদরাসার শিক্ষার্থী। করোনা মহামারীর সময় ভ্যাকসিন নিয়েছি। সম্প্রতি শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি ও জ্বর থাকায় আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন আমি স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্ত। অনেকের কাছে শুনেছি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন যারা নিয়েছিলেন তারাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কথা শুনার পর থেকে আমি আতঙ্কে রয়েছি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার ৫ নম্বর কালাপুর ইউনিয়নের লামুয়া গ্রামের ছমির মিয়া বলেন, ‘বুধবার সকালে শরীরে চুলকানি নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম। লক্ষণ দেখে ডাক্তার বলেলেন আমি কি একটা রোগে আক্রান্ত। রোগটির নামও নতুন শুনলাম। আমার পরিবারে আরো দুই জনের একই অবস্থা। ডাক্তার বলেছেন আমাদের বিছানা, কাপড়সহ ব্যবহার করা জিনিসপত্র আলাদা করতে এবং এক গামছা দিয়ে শরীর না মুছতেও বলেছেন। রোগটি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। জানি না কি হবে?’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শারমিন আক্তার বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের টীকা গ্রহণকারীরা কেবল স্ক্যাবিস আক্রান্ত হচ্ছে এমন কথা অনেকেই বললেও এর কোন সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি গবেষণার বিষয়। অযথা এ নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। তবে এটি একটি ছোঁয়োছে রোগ। অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নোংরা কাপড় চোপড় পরিধান, এক সাথে অনেক মানুষের বিছানা ইত্যাদি থেকে সাধারণত চুলকানির মতো এই স্ক্যাবিস সংক্রমন দেখা দিতে পারে। সঠিক চিকিসৎসা ও রোগ প্রতিরোধে নিয়মগুলো মেনে চললে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। স্ক্যাবিস রোগটি করোনা ভাইরাসের মতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার কোন আশংকা বা সম্ভবনা নেই। আমাদের হাসপাতালে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এ নিয়ে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’