lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ২১ মে, ২০২৫
Last Updated 2025-05-21T11:54:59Z
জাতীয়শিক্ষা

আটোয়ারীতে এসএসসির ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষকদের লাখ লাখ টাকা আয়

Advertisement


 


সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ চলতি বছরের এসএসসির পরীক্ষা শুরু হয়েছিল এপ্রিলের ১০ তারিখে। লিখত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলো ২২ মে। লিখত পরীক্ষা শেষে ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পুরো নম্বর দেওয়ার নাম করে স্কুল ও শিক্ষার্থী ভেদে পাঁচশো থেকে নয়শো করে টাকা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 



এমন তথ্য পাওয়া গেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় দুই এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে। এছাড়াও ব্যবহারিক ও মৌলিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেয়ার কথা বলে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের কাছে সাতশো থেকে আটশো টাকা নেওয়ারও তথ্য পাওয়া গেছে। 



আটোয়ারীতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার মোট দুটি পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল। একটি হলো আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং আরেকটি হলো আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ দুটি কেন্দ্র মোট পরীক্ষার্থী ১৩৮৬ জন। এরমধ্যে আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৯৫ এবং আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।  



এপ্রিলের ১০ তারিখ লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় গত ৮ মে। এরপর থেকে শুরু হয় বিজ্ঞান, মানবিক ও ভোকেশনাল বিভাগের বিভিন্ন ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা। এবং শেষ হয় ২২ মে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পুরো ২৫ নম্বর দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষার্থী ভেদে নেওয়া হয়েছে পাঁচশো থেকে হাজার টাকা। কেউ কেউ দিয়েছে কেন্দ্রে দ্বায়িত্বে থাকা শিক্ষককে আবার কেউ কেউ টাকা দিয়েছে নিজ স্কুলের শিক্ষককে।



বিজ্ঞান বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী জানায়, তার সব ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইউনুস আলীকে মোট ১ হাজার টাকা দিয়েছে। সে আরো জানায়, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ওই স্কুলের শিক্ষক ইউনুস আলী অথবা অপু মাষ্টারকে টাকা দিলেই হবে। ইউনুস ও অপু স্যার মিলেই টাকা নিচ্ছে। দুজনের একজনকে টাকা দিলেই হয়৷ 



ভোকেশনালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পরীক্ষার্থী জানায়, আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনালের মনা স্যার তাদের কাছে থেকে আটশো থেকে হাজার টাকা নিয়েছে। সে আরো জানায়, মনা স্যার তাদেরকে ইমোশনালি এমন কথাবার্তা বলে যেন তারা টাকা দিতে বাধ্য হয়। নইলে মার্ক কম দেওয়া অথবা ফেল করে দেওয়ারও কথা জানা যায়। তাই ভালো মার্কের আশায় মান স্যারকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে তারা।



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানায়, আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসি শিক্ষক শচীন তাদের কাছে থেকে নয়শো করে টাকা নিয়েছে। কেন দিয়েছে এমন প্রশ্নে পরীক্ষার্থীরা জানায়, প্রথমে তাদেরকে ইমোশনালি কিছু কথাবার্তা বলা হয়। যাতে করে পরীক্ষার্থীরা টাকা দিতে বাধ্য হয় এবং ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পুরো নম্বর পায়। 



মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পরীক্ষার্থী জানায়, তাদের স্কুলের শিক্ষক শাহীন তাদের কাছ থেকে সাতশো আটশো টাকা নিয়েছে। সেই টাকা নাকি ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার দ্বায়িত্বে থাকা শিক্ষককে দেওয়া হবে, যাতে তাদেরকে ভালো মার্ক দেওয়া হয়।



বার আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা জানায়, তাদের স্কুলের বিএসি শিক্ষক শরিফুল ইসলাম তাদের কাছে থেকে সাতশো করে টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা নাকি ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার দ্বায়িত্বে থাকা শিক্ষককে দেওয়া হবে, যাতে তাদেরকে ভালো মার্ক দেওয়া হয়। একই ভাবে আলোয়াখোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালায়ের পরীক্ষার্থীরাও তাদের এক শিক্ষিকাকে সাতশো করে টাকা দিয়েছে বলে জানা যায়। আরো জানা যায় যে, আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ এই দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ্যাৎ এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইচ্ছে করে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছেনা৷ তবে কিছু কিছু পরীক্ষার্থীদের কাছে টাকা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 



হিসেব করে দেখা যায় ওই দুটি কেন্দ্রের মোট ১৩৮৬ পরীক্ষার্থীর কাছে সর্বনিম্ন পাঁচশো করে টাকা নেওয়া হলেও এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাত লক্ষ টাকা।



এবিষয়ে আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব শরমিন পারভীন জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য টাকা নিচ্ছেন এই ব্যাপারে আমার জানা নাই। কোনো শিক্ষক যদি টাকা নিয়েও থাকে তবে আমি ওই বিষয়ে জড়িত নই। যদি তথ্য ও প্রমাণে সত্যতা মিলে তাহলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথ বলেন তিনি। 



আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আব্দুল কুদ্দুস জানান, টাকা নিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এবং টাকা নেওয়ারও বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনো শিক্ষক যদি টাকা নিয়ে থাকে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।



ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য আলাদা কোনো টাকা নেওয়ার বিধান আছে কিনা এবিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মোঃ কামরুল হাসান জানান, সরকারি বিধিতে এভাবে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে আমি অবগত না। যদি এমন কোনো অভিযোগ আসে তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।