lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
Last Updated 2024-12-18T05:19:37Z
আইন ও অপরাধ

পুলিশের খাতায় পলাতক হলেও কর্মস্থলের হাজিরা খাতায় উপস্থিত শ্রীমঙ্গলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কায়েছ

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ:

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বশিউক), রাবার বিভাগ, সিলেট জোনের আওতাধীন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও রাবার বাগানের অস্থায়ী মাঠকর্মী পদে কর্মরত নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খছরুল আহমেদ (কায়েছ) মৌলভীবাজার আদালত ও শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত একাধিক মামলার পলাতক আসামি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায়ও তার কর্মস্থলের হাজিরা খাতায় তিনি উপস্থিত। সাতগাঁও রাবার বাগানের এসিসট্যান্ড ফিল্ড সুপারেনডেন্ট মিজানুর রহমান জানিয়েছেন কায়েছ বাগানে নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে দায়িত্ব¡ পালন করছেন, বেতনও নিচ্ছেন। 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখাঁন এলাকার বাসিন্দা সুজন মিয়ার ছেলে খছরুল আহমেদ (কায়েছ)। ২০১৭ সালে ৫ মার্চ মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক ঘোষিত শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ওই কমিটির সভাপতি মঞ্জুর হোসেন সজিব প্রবাসে গমন করায় কায়েছ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ প্রাপ্তির পরপরই কায়েছ বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বশিউক), রাবার বিভাগ, সিলেট জোনের আওতাধীন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও রাবার বাগানে অস্থায়ী মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ পান। তার আপন চাচা ছালেহ আহম্মদ রেনু ওই বাগানের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি। প্রভাবশালী চাচার সহযোগিতায় ও সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় সেই প্রভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে বাগানে নিয়মিত কাজ না করেই বেতন উত্তোলন করতেন কায়েছ এমন অভিযোগও ওঠেছে। বাগানের কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কায়েছ বাগানের মাঠকর্মী হিসেবে বেতন নিলেও মাঝে-মধ্যে মোটরসাইকেলযোগে তাকে বাগানে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। মাসের অধিকাংশ দিনই তিনি বাগানের কাজে না থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন এবং বাগান থেকে বেত নিতেন। চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করেন কায়েছ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার আদালত ও শ্রীমঙ্গল থানায় একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের খাতায় সে পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু কর্মস্থলের হাজিরা খাতায় তিনি উপস্থিত রয়েছেন। 

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে খছরুল আহমেদ (কায়েছ) এর মুঠোফোনে নম্বরে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর একাধিকবার কল করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সাতগাঁও রাবার বাগানের এসিসট্যান্ড ফিল্ড সুপারেনডেন্ট মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাগানের অস্থায়ী মাঠকর্মী মো. খছরুল আহমেদ (কায়েছ)। তিনি নিয়মিত বাগানে ডিউটি করছেন। তবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে কিছুদিন বাগানে আসেননি। অস্থায়ীদের সিস্টেম হলো যেদিন কাজে আসবেন, সেদিনের বেতন পাবেন। কাজে না আসলে বেতন নেই। ১৫ ডিসেম্বরও তিনি ডিউটিতে এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।’

বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) জয়দেব বিশ্বাস বলেন, ‘কায়েছ এই মাসে শুধু আসেন না, গত মাসে আসছিলেন। সেলারি বিল দেখলে বুঝা যাবে।’

সাতগাঁও রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক (চ. দা.) শাহ্ মো. শাকিল বলেন, ‘আমাদের বাগানের অস্থায়ী মাঠকর্মী কায়েছ সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতার প্রভাবে কাজ না করেই বেতন নিয়েছেন এমন অভিযোগ সত্য নয়। তিনি প্রায় নিয়মিতই বাগানে তার কর্মস্থলে আসতেন। এখনো কাজে আসছেন এবং বেতনও গ্রহণ করছেন। গতমাস পর্যন্ত তিনি বাগানের কাজে নিয়মিত ছিলেন, এইমাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসেও তাকে ১-২ দিন ফিল্ড ভিজিটে গিয়ে আমি দেখেছি। আমি সব সময় সব ফিল্ড ভিজিটে যেতে পারি না। তবে যতদিন কায়েছের ফিল্ডে গিয়েছি তাকে পেয়েছি। সাধারণত আমাদের মাঠকর্মীদের নিয়মিত অফিসে আসতে হয় না। তিনি তার কর্ম এলাকায় কোন দূর্ঘটনা হলে বা অন্যান্য বিষয়াদি দেখাশুনা করার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি নিয়মিত ফিল্ডে আসেন কি না তা বলতে পারবেন আমাদের এসিসট্যান্ড ফিল্ড সুপারেনডেন্ট মো. মিজানুর রহমান। কায়েছ তার আন্ডরেই কর্মরত। আমি মাঝে-মধ্যে তাদের এলাকা ভিজিটে গেলে কায়েছকে পাই এবং অস্থায়ী মাঠকর্মী হিসেবে হিসেবে তার হাজিরা আছে। তিনি যেহেতু অস্থায়ী শ্রমিক সেহেতু যেদিন কাজে আসবেন সেদিন বেতন পাবেন, যেদিন আসবেন না সেদিনের বেতন পাবার প্রশ্নই আসে না। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা রয়েছে কিনা তা জানি না। কেউ আমাকে জানায়নিও। এখন জানলাম তার বিরুদ্ধে মামলার কথা। আমি খোঁজ নেব।’ 

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পৌর ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কায়েছের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে এবং মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’