Advertisement
এম এ সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে ডাংগীরহাট সরকারি প্রাথমিক ও ডাংগীরহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত (১০ জুন) বিদ্যালয় দুটির একমাত্র খেলার মাঠে জোরপূর্বক দুটি ঘর নির্মাণ করা হয়। এবিষয়ে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পাঁচ জনের নাম উল্লেখ্য করে অজ্ঞাত আরো বিশ থেকে পঁচিশ জনের বিরুদ্ধে আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে সিএস খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক মরহুম মাতব্বর সরকার ৬৬ শতক জমি ডাংগীরহাটের নামে দান পত্র প্রদান করেন। যা পরবর্তীতে সরকারি ১/২৮০ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যার মৌজা-যুগিকাটা, জেএল নং-১৬, ডিপি খতিয়ান-৪, খতিয়ান নং-৩ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত।
তফশিল বর্ণিত ডাংগীরহাটের পূর্বে গোয়ালপাড়া ও পশ্চিমে ধামোর হাট অবস্থিত হওয়ায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে পড়ে হাটটি। তাই দীর্ঘ দিন হাটের জমিটি শূন্যে পড়ে থাকে। এমতাবস্থায় এলাকার শিক্ষানুরাগী কিছু মানুষ শিক্ষার বিস্তার লাভের জন্য ১৯৯১ সালে হাটের দক্ষিণ পাশে হাটের নামানুসারে ডাংগীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। যার এমপিও ভুক্ত হয় ১৯৯৬ ও জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে।
এছাড়াও আশেপাশে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় ১৯৯৩ সালে হাটের পশ্চিম পাশে হাটের নামানুসারে আরেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার নাম করণ করা হয় ডাংগীরহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। এটিও এমপিও ভুক্তির আওতায় আসে পরের বছরেই অর্থ্যাৎ ১৯৯৪ সালে।
দীর্ঘ ২৮/৩০ বছর কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি অবাধে মাঠে বিচরণ করে তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পেতো। শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করে শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটিয়ে দেশ গড়ার কারিগর হওয়ার স্বপ্ন বুনতো। কিন্তু খেলার মাঠে এমন অপ্রীতিকর অবস্থা এবং মাঠ দখল করে ঘর নির্মাণের জন্য শিক্ষার্থীদের ওই স্বপ্ন পূরণের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। তাদের খেলার মাঠ বন্ধ হয়ে গেছে।
মাঠে কোমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোও অনুষ্ঠিত হতো নিয়মিত। এছাড়াও জাতীয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এ মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। মাঠের এমন বেদখলের জন্য সবকিছুই হুমকির মুখে পড়েছে। তাই মাঠের এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অবিভাবকসহ এলাকাবাসী। তারা পূর্বের ন্যায় মাঠের অবস্থা ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের পাঠ দানে মনোযোগ সৃষ্টি করার দাবিও জানান।
তাছাড়া নির্মিত নতুন ঘরগুলোর পাশেই রয়েছে শহীদ মিনার। সেখানে শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষ ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। শহীদ মিনারের কোল ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরগুলো। যার ফলে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার রাস্তাটিও বন্ধের মুখে পড়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শায়লা সাঈদ তন্বী জানান, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে ঘর নির্মাণের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। তিনি আমাকে ওই অভিযোগটি হস্তান্তর করেছেন। আমি ইতিমধ্যে ধামোর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করে আগামী তিন দিনের মধ্যে এর সঠিক তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলেছি। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী অতি শিগগিরই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।