lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
Last Updated 2025-12-26T03:38:12Z
ব্রেকিং নিউজ

কচাকাটা হাইস্কুলের ৭লক্ষ টাকার গাছ ৯৯ হাজারে বিক্রি: ট্রেন্ডার কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

Advertisement


 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের কচাকাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপন টেন্ডারে বিধি বহির্ভূতভাবে ৭টি অতি-পুরনো ও মোটা গাছ নামমাত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ট্রেন্ডার ও বিক্রয় কমিটি এবং কেদার ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান কবিরের বিরুদ্ধে। গাছ নিলাম-ক্রয়কারী মাহাবুর রহমানের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান কবির সরল মনে তাকে ফাঁসিয়ে তার নাম ব্যবহার করে নিজেই গাছগুলো নিলামে কিনে নিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছেন। নিলামের বিষয়ে তিনি অবগত না। এর বিচার দাবি করেছেন।


সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার কেদার ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কচাকাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো ঘর সংস্কারের নামে স্কুলের ভেতরে থাকা ৭০বছরের পুরনো ও বড় বড় ৩টি মেহগুনি, ২টি রেইন্ট্রি কড়াই ও ২টি অর্জুন গাছ নিলাম ও বিক্রয়ের জন্য গত ২৬নভেম্বর ২০২৫খ্রিঃ নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন পূর্বক আদেশ জারি করে। ওই টেন্ডার ও বিক্রয় কমিটির আহবায়ক প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান কবির, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিনিধি উপজেলা পল্লী উন্নন অফিসার গোলাম মোস্তফা, উপজেলা পরিবেশ ও বন কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান শাহিন, কচাকাটা হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক মোখলেসুর রহমান মোটা অঙ্কের অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে বিধি বহির্ভূতভাবে গোপনে দরপত্র আহ্বান করে এবং নাগেশ্বরী পল্লী উন্নন অফিসে গোপন বৈঠকে কাগজে-কলমে গাছের বাজার মূল্য নির্ধারণ ও টেন্ডারে মাহাবুর রহমানের নামে গাছ বিক্রি সম্পূর্ণ করেন। অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেদার ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান কবির ৭টি বড় বড় গাছ নামমাত্র মূল্যে ৯৯হাজার ৯৭২টাকায় মাহাবুর রহমানের নামে কিনে নেয়। যার আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭লক্ষ টাকা। এদিকে প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান কবির স্কুলের কর্তনকৃত ৭টি গাছের মধ্যে ১টি মেহগুনির ৩টি খন্ড স্থানীয় ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলামের মিকট ১টি খন্ড ৫০হাজার, বিশ্বজিৎ মাস্টারের কাছে ৭হাজার ও বাবুর নিকট ১৩হাজার টাকা বিক্রি করেন। অবশিষ্ট গাছের অংশ প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান তার গ্রামের বাড়ি পূর্ব খামার গ্রামে নেয়ার পরে আসবাবপত্র তৈরীর লক্ষ্যে ভ্রাম্যমান ছমিল মালিক হামিদুল ইসলামের মাধ্যমে গাছের খন্ডগুলো ফারাই করে। স্কুলের ভেতরে থাকা ৭০বছরের পুরনো ও বড় বড় ৩টি মেহগুনি, ২টি রেইন্ট্রি কড়াই ও ২টি অর্জুন গাছের বাজার মূল্য ৭লক্ষের কর্তন করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


বিদ্যালয়ের গাছ টেন্ডার বা নিলামের নীতিমালায় উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান প্রধানের আবেদনের ভিত্তিতে পরিচালনা কমিটি সভায় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে বন বিভাগের মূল্যায়ন ও বাজার মূল্য নির্ধারণে প্রকাশ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি বাধ্যতামূলক এবং বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগার বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা করা। অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ কাটা বন্ধ রাখতে নির্দেশনা জারি রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাছ টেন্ডার বা নিলাম কমিটিরব ৪ সদস্য টেন্ডার ও নিলামের নীতিমালা অমান্য করে মোটা অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে কাগজে কলমে শতভাগ নিলাম সম্পূর্ণ করেন। 


স্থানীয় রবিউল আলম, আনোয়ার হোসেন, আব্দুস সালাম বলেন, কচাকাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও কেদার ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সেক্রেটারি নুরুজ্জামান কবির স্কুলের ভেতরে থাকা ৭০বছরের পুরনো ও বড় বড় ৩টি মেহগুনি, ২টি রেইন্ট্রি কড়াই ও ২টি অর্জুন গাছ যাহার মূল্য প্রায় ৭লক্ষ টাকা হলেও বিধি বহির্ভূতভাবে ৯৯হাজার ৯৭২টাকায় গোপনে নিলামে কিনে নিয়ে কিছু গাছের খন্ড বিক্রি করে এবং অবশিষ্ট গাছের অংশ বাড়িতে নিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করছেন। নিলামের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।


স্থানীয় আতাউর রহমান, ওমর ফারুক, মাহিমুল ইসলাম মজনু, রবিউল ইসলাম, হানিফ উদ্দিন বলেন, কেদার ইউনিয়ন জাতীয়পার্টির কয়েক-বারের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজার রহমানের ছেলে নুরুজ্জামান কবির কচাকাটা হাইস্কুলে সহকারি শিক্ষক থাকাকালীন কেদার ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি ছিলেন এবং তার পিতা ওই স্কুলের সভাপতি থাকার দাপটে প্রধান শিক্ষকের পথ বাগিয়ে নেন। নুরুজ্জামানের দাপটে সেই সময় চলছিল এক নায়কতন্ত্র হিসেবে স্কুলের সমস্ত কার্যক্রম। তার অনিয়মে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্কুলের ভেতরে থাকা ৭০বছরের ৭টি গাছের মূল্য প্রায় ৭লক্ষ টাকা হলেও নামমাত্র নিলামে ৯৯হাজার ৯৭২টাকায় গাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করছেন। নিলামের বিষয়ে আমরা এলাকাবাসী কিছু জানি না। এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।


কচাকাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, টেন্ডার নিলাম কমিটির আহবায়ক ও কেদার ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সেক্রেটারি নুরুজ্জামান কবিরের দাবি, কাগজপত্র ঠিক রেখেই বিদ্যালয়ের গাছ নিলামে বিক্রি হয়েছে বলেই ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখেন।


উপজেলা পরিবেশ ও বন কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান শাহিন বলেন, নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ৪ সদস্য বিশিষ্ট টেন্ডার ও বিক্রয় কমিটি দরপত্র আহ্বান করেন এবং স্কুলের ৩টি মেহগুনি, ২টি রেইন্ট্রি কড়াই ও ২টি অর্জুন গাছ নিলামে বিক্রি হয়েছে।


উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিনিধি উপজেলা পল্লী উন্নন অফিসার মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজার মূল্য নির্ধারণে প্রকাশ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে করা হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের ৭টি গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে নিলাম হয়েছে। টেন্ডার ও বিক্রয়ের কাগজপত্র আমার কাছে নেই। প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান কবিরের কাছে আছে এবং প্রধান শিক্ষক গাছগুলো কেটে নিয়েছেন। 


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, গাছ টেন্ডার ও বিক্রয় কমিটিতে আমি ছিলাম না। আমার কাছে কোন কাগজপত্র নেই।


কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, আইন অমান্য করে গাছ টেন্ডার ও বিক্রয় কমিটির অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।