lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
Last Updated 2025-07-14T14:53:54Z
জাতীয়

শ্রীমঙ্গলের আলোচিত কলেজ ছাত্র হৃদয় হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ২

Advertisement


 


ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আলোচিত কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন (১৯) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, মোবাইল ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার দাড়িয়াকান্দি গ্রামের টমটম চালক মো. কাজল মিয়া (২০) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাদাম বিক্রেতা মো. সিরাজুল ইসলাম (২১)। উভয়েই বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাহীবাগ আবাসিক এলাকার ভাড়াটিয়া। সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নিহত হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি শ্রীমঙ্গল শহরের কালীঘাট রোড এলাকায় ওয়াইফাই অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে হৃদয় তার বন্ধু টমটম চালক কাজলের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। এ টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। 

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, নিহত হৃদয়ের কাছে প্রায় ২২ হাজার টাকা পাওনা ছিল তার বন্ধু টমটম চালক মো. কাজল মিয়ার। পরবর্তীতে হৃদয় চাকরি দেওয়ার কথা বলে কাজলকে ঢাকায় নিয়ে গেলেও চাকরি না হওয়া এবং পাওনা টাকা টাকা ফেরত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এই দুই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়। গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে কাজল ও সিরাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হৃদয়কে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়নের ফিনলে টি কোম্পানির কাকিয়াছড়া চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনে নিয়ে যায়। সেখানে নিহত হৃদয়ের সঙ্গে কাজল আর সিরাজের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে কাজল আর সিরাজ তাদের ব্যাগ থেকে গামছা বের করে হৃদয়ের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে। হৃদয় মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে তারা তার পরনের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে, যেন মনে হয় হৃদয় আত্মহত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের পর হৃদয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন আর মোটরসাইকেল নিয়ে রাত প্রায় ১২টার দিকে হবিগঞ্জ রোডে সখিনা সিএনজি পাম্পের পাশের ব্যবসায়ী মোর্শেদের কাছে মোবাইল ফোনটি মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজাপুর গ্রামে সিরাজুল ইসলামের নানার বাড়িতে পালিয়ে যায় এবং সেখানে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে ১৩ জুলাই তাদের গ্রেপ্তার করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। 

হত্যা রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে জেলা পুলিশ জানায়, সোমবার (৭ জুলাই) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগান ১ নম্বর সেকশন এলাকায় একটি গাছের নিচে বেল্ট দিয়ে বাঁধা অবস্থায় এক তরুণের মরদেহ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গাছের সাথে গলায় বেল্ট পেঁচানে অবস্থায় একটি মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। লাশ পাবার পর পরই মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা ও সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমানের তত্ত¡াবধানে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়। শহরের সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুই আসামির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অলক বিহারী গুণ ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার রাজাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মো. কাজল মিয়া এবং মো. সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মতে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, ভিকটিমের মোবাইল এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।