Advertisement
সালাম মুর্শেদী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ২৫০ বস্তা ভুট্টাসহ হাইজ্যাক হওয়া সেই কাভার্ডভ্যানটি ২ বছর পর উদ্ধার করেছে আটোয়ারী থানা পুলিশ।
শনিবার (১৯ জুলাই) গাজীপুর জেলা থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহায়তায় এবং আটোয়ারী থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম বিশেষ অভিযানের প্রেক্ষিতে হাইজ্যাক হওয়া ওই কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করে। পরে ২০ জুলাই, উদ্ধারকৃত ওই কাভার্ডভ্যানটি আটোয়ারী থানায় নিয়ে আসা হয়।
পঞ্চগড় সদরের সার্কেল এসপি, আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম সরকার জুয়েল এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় ও মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মোঃ আব্দুস সালামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ চৌকস টিম কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধারের জন্য গাজীপুরে যান৷ পরে সেখানেই গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহায়তায় কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করেন তারা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুকনা ভুট্টা ক্রয় করার জন্য ২০২৩ সালের ১৩ আগষ্ট, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার দালালপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে শাহ আলম পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে আসেন। ওইদিনই শাহ আলম উপজেলার ছোটদাপ গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকার সমমূল্যের ২৫০ বস্তা শুকনা ভুট্টা ক্রয় করেন।
সেখানে পূর্ব পরিচিত বোদা উপজেলার জামাদার পাড়া গ্রামের চঞ্চল মজুমদারের ছেলে পলাশের সহায়তায় একটি কাভার্ডভ্যান ভাড়া নেন তিনি। কাভার্ডভ্যানে ২৫০ বস্তা ভুট্টা লোড হওয়ার পরে সেটি গাজীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত 'গাজীপুর ভরসা এ্যাগ্রো মিলস লি:' এর উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে ছেড়ে যায়। গাড়িটির রেজিঃ নম্বর ছিল- ঢাকা মেট্রো-ট-১৫৫৭৬৫
পরবর্তীতে ১৫ আগষ্ট, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করে। সেময় ড্রাইভার তাকে জানায় টাঙ্গাইলে গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে। সারাতে কিছুটা সময় লাগবে। এর ঘন্টাখানেক পরে শাহ আলম গাড়ির ড্রাইভারকে আবার কল দিলে ফোন নম্বর বন্ধ দেখায়। এরপরে কাভার্ডভ্যান জোগাড় করে দেওয়া পলাশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে প্রথমবার বিষয়টি দেখার কথা বলে ফোন বন্ধ করে রাখে। ততক্ষণে শাহ আলমের বোঝতে পারে যে তার ৫ লক্ষ টাকার ২৫০ বস্তা শুকনা ভুট্টা বস্তা গায়েব হয়ে যেতে বসেছে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভুট্টার কোনো খোঁজ না পেয়ে ২২ আগষ্ট পলাশ'কে প্রধান অভিযুক্ত করে কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার ও পঞ্চগড় সদর উপজেলার গলেহা কান্তমুনি গ্রামের দারাজ উদ্দিনের ছেলে মোকছেদুল আলী সহ অজ্ঞাত আরো ৩ থেকে ৪ জনের নামে আটোয়ারী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
সে-ই এজাহারের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ২ বছর পরে হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহায়তায় আটোয়ারী থানার এসআই মোঃ আব্দুস সালামের নেতৃত্বে ওই কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করা হয়।
এবিষয়ে অভিযোগকারী শাহ আলম মুঠোফোনে জানান, ২০২৩ সালের ১৩ আগষ্ট আমার ৫ লক্ষ টাকার ২৫০ বস্তা নিয়ে ওই কাভার্ডভ্যানটি গাজীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত 'গাজীপুর ভরসা এ্যাগ্রো মিলস লি:' এর উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে রওয়ানা দেয়। পরে আমি কিছুক্ষণ পর পর গাড়ি কতদূর গেল তার আপডেট নিতে থাকি। ১৫ আগষ্টের দিন ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করলে জানতে পারি যে টাঙ্গাইলে গাড়ির চাকা পাংচার হয়েছে। আবার ঘন্টাখানেক পর আপডেট জানার জন্য ফোন দিলে ফোন নম্বর বন্ধ পাই। পরবর্তীতে অনেকবার চেষ্টা করলে আবারো ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া বুঝতে পারি যে আমার ভুট্টা গুলো হয়তো হাইজ্যাক হয়ে গেল। পরবর্তী ২৩ আগষ্ট আমি আটোয়ারী থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করি। কিন্তু গতকাল আমি আটোয়ারী থানার এসআই মোঃ আব্দুস সালামের মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে পারি যে ওই কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করে আটোয়ারী থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী অফিসার আটোয়ারী থানার এসআই মোঃ আব্দুস সালাম জানান, মামলার এজাহারের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিতে থাকি। আমাদের সার্কেল এসপি ও ওসি'র দিকনির্দেশনায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে ওই কাভার্ডভ্যানটি গাজীপুরে অবস্থান করছে। ১৯ জুলাই, গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহায়তায় গাজীপুরের বাসন থানার অন্তর্গত গাজীপুর ঘুগড়া বাইপাস ফ্লাইওভারের নিচ থেকে ওই কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করি। ২০ জুলাই, সকালে আটোয়ারী থানায় আমরা কাভার্ডভ্যানটি নিয়ে আসি।
এবিষয়ে আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম সরকার জুয়েল বলেন, মামলার এজাহারের ভিত্তিতে সার্কেল এসপি'র সার্বিক দিকনির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আব্দুস সালামের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহায়তায় গাজীপুরের বাসন থানার অন্তর্গত গাজীপুর ঘুগড়া বাইপাস ফ্লাইওভারের নিচ থেকে ওই কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।