Advertisement
এইচ এম রাসেল, বরগুনা প্রতিনিধি:
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রমে বিএনপি নেতা ফোরকান মিয়া বাঁধা দেয়ার অভিযোগ দেয়ার দুই ইউপি সদস্যকে তিনি ও তার সহযোগীরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী এমন অভিযোগ করেছেন। ঘটনা ঘটেছে শনিবার বিকেল ৩ টায় তালতলীর মালিপাড়া স্লুইসগেট এলাকায়।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলা বিএনপি সদস্য মোঃ ফোরকান গাজী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে হতদরিদ্রদের সহায়তার চাল দাবী করেন। তাকে চাল না দিলে তিনি চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্যদের গালাগাল করেন। গত ৮ মাস ধরে এভাবে চলে আসছে এমন অভিযোগ ইউপি সদস্যদের। গত বৃহস্পতিবার ওই ইউনিয়নের ১১ ইউপি সদস্য মিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফোরকান মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয় তিনি। এ ঘটনার জের ধরে শনিবার দুপুরে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন পরিষদ থেকে বের হয়ে বাসায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তাকে ফোরকান ও তার লোকজন তুলে মালিপাড়া ¯øুইজগেট এলাকায় নিয়ে যায়। ওইখানে নিয়ে তাকে তারা ঘিরে রাখে। ওই সময় আরেক ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী অটোগাড়ীতে বাড়ি যাচ্ছিল, তাকেও ফোরকান গাজী ও তা সহযোগী সেকান্দার মল্লিক, জুলহাস মল্লিক, শাহআলম ও রুবেলসহ ১৫/২০ জন গাড়ী থেকে টেনে নামায়। পরে তাদের দুইজনকে এলোপাথারী মারধর করে। তাদের মারধর প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন রক্তাক্ত জখম হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয় হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন ফোরকান গাজী উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোক। তিনি গত ৭-৮ মাস ধরে প্রায়ই মানুষকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছে। মান সম্মানের ভয়ে অনেকে তার অত্যাচার নিরবে সহ্য করছেন। তারা আরো বলেন, দুই ইউপি সদস্যকে ফোরকান ও তার লোকজন মারধর করেছে। আমরা দাড়িয়ে দেখেছি কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে যাইনি।
৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে সন্ত্রাসী ফোরকান গাজী পরিষদে গিয়ে হতদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত চাল দাবী করে। তাকে চাল না দিলেই তিনি পরিষদের সকলকে গালাগাল করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। তার এমন আচরণে আমরা অতিষ্ট হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এর জের ধরে আমাদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আমাকে মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, তারা মারধর করে আমার পকেটে থাকা ৮ হাজার দুই’শ টাকা নিয়ে গেছে।
বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফোরকানের বিরুদ্ধে পরিষদের সকল ইউপি সদস্য মিলে অফিযোগ দিয়েছি। এতে ক্ষুব্দ হয়ে আমাদের মারধর করেছে।
তালতলী উপজেলা বিএনপি সদস্য মোঃ ফোরকান মিয়া প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, তাদের সাথে আমার লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় প্যানেল চেয়ারম্যানের নাকে আঘাত পেয়েছে। কিন্তু কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়টি উপজের বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম মামুন ভাই জানেন। তিনিই সমাধান করে দিবেন। তবে এ বিষয়ে জানতে মামুনকে তার মুঠোফোন একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক বলেন, ফোরকান আমার দলের সদস্য তা ঠিক কিন্তু তিনি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত এক নেতার কথায় চলে। তার (বহিস্কৃত) সাথে নৈতিক অনৈতিক নানাভাবে তার সখ্যতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলার দলীয় ফোরামে সুপারিশ করা হবে।
তালতলী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, বিষয়টি জেনেছি। দুই ইউপি সদস্যকে থানার এসে অভিযোগ দিতে বলেছি। তারা অভিযোগ দিলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ওই ফোরকানের বিরুদ্ধে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের ১১ সদস্য স্বাক্ষরিক একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দিয়েছেন। তিনি আমাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ উম্মে সালমা বলেন, দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে দুই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মারধরের স্বীকার ইউপি সদস্যরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছিল।