lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ২১ মে, ২০২৫
Last Updated 2025-05-21T09:15:49Z
ব্রেকিং নিউজ

শ্রীমঙ্গল শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ‘ক্যাসিয়া জাভানিকা’

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

আমাদের দেশে দুর্লভ কয়েকটি ফুলের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘ক্যাসিয়া জাভানিকা’। বাংলায় যার নাম ‘লাল সোনাইল’। এ ফুলটি ‘জাভা ক্যাসিয়া’, ‘গোলাপী ঝরণা’, ‘আপেল ব্লসম ট্রি’ এবং ‘রেইনবো শাওয়ার ট্রি’ নামেও পরিচিত। সেই দুর্লভ ফুলের দেখা মিলেছে মৌলভীবাজারের চায়ের রাজধানী ও পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডস্থ কবরস্থানের পাশে। মাত্র তিন বছর বয়সী ক্যাসিয়া জাভানিকা গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে থাকা গোলাপি ও লাল রঙের ফুল মুগ্ধতার আবেশে ভরিয়ে দিচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী পথচারী, শিক্ষার্থী এবং পর্যটকদের। ফুলটির রঙ গোলাপি ও লাল হওয়ায় অনেক দুর থেকেও এ ফুলটি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে চলেছে। শহরের কলেজ রোডে ক্যাসিয়া জাভানিকা গাছটি ২০২২ সালে রোপন করেছিলেন শিক্ষক, সৌখিন ফটোগ্রাফার, ছবির কবি নামে সুপরিচিত, প্রকৃতি ও বৃক্ষপ্রেমি তারিক হাসান। তিনি আরো কয়েকটি ক্যাসিয়া জাভানিকা ফুলের চারা চারুকলা একাডেমি প্রাঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থানে রোপন করেছেন।

জানা যায়, ক্যাসিয়া জাভানিকা ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ছাড়াও ইন্দোনেশিয়াসহ উষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় এ ফুল ফোটে। ক্যাসিয়া জাভানিকা গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, মাঝারি আকৃতির, ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে গাছটিতে থোকায় থোকায় গোলাপি ও লাল রঙের ফুল ফোটে। অপরূপ সৌন্দর্যময় ফুলের পাশাপাশি ক্যাসিয়া জাভানিকার নানা ধরণের ভেষজ উপকারীতাও রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলিক, ক্লোরোসিসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। গাছটির পাতা হারপিস সিমপ্লেক্সের (এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ) বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গাছটির ছাল বা বাকল আয়ুর্বেদিক ও অন্যান্য ওষুধের অ্যান্টিডায়াবেটিক ফরমুলেশনের অন্যতম উপাদান। এছাড়াও এটির ছাল বা বাকল ট্যানারি শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে ক্যাসিয়া জাভানিকা ফুলের গাছ রোপনের বিষয়ে শিক্ষক ও সৌখিন ফটোগ্রাফার ছবির কবি তারিক হাসান বলেন, ‘২০২২ সালের ১২ই রবিউল আওয়াল শেষ নবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন উপলক্ষে গাছটি রোপন করি। শহরতলীর দ্বারিকা পাল মহিলা ডিগ্রি কলেজের পাশে অবস্থিত নুরুল ইসলামের নার্সারী থেকে ক্যাসিয়া জাভানিকা গাছের চারাটি সংগ্রহ করে কলেজ রোডস্থ কবরস্থানের সামনে পশ্চিম কোনায় রোপন করার পর গত বছর গাছটিতে অল্প পরিমাণ ফুল এসেছিল। এবার অনেক বেশি ফুল এসেছে। এ গাছটি আমাদের দেশে অনেকটা দুর্লভ একটি ফুলের গাছ। কলেজ রোডস্থ কবরস্থানের পাশের গাছটি ছাড়াও আমি এ জাতের আরো বেশ কয়েকটি চারা চারুকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে রোপন করেছি। সেগুলোতে ১-২ বছরের মধ্যে ফল ফুটবে। তখন পুরো এলাকা অপরূপ হয়ে ওঠবে।’ 

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুবেদা আক্তার বলেন, ‘ক্যাসিয়া জাভানিকা গাছটির অপরূপ সৌন্দর্যময় ফুল অনেক দুর থেকে দেখা যায়। কলেজে যাওয়া-আসার পথে ফুলটির সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে ওই গাছটির নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। এতে যেন ক্লান্তি দুর হয়ে যায়। প্রতিদিন বিকেল বেলা ক্যাসিয়া জাভানিকা ফুল গাছটির ছায়ায় পানিপুড়ি বিক্রি করেন এক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ গাছটির নিচে এসে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পানিপুড়ি খেয়ে যান’।

রাধানগর এলাকায় অবস্থিত শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী তানভীরুল আরেফিন লিংকন বলেন, ‘প্রকৃতিগতভাবে শ্রীমঙ্গল এমনিতেই অপার সৌন্দর্যময় উপজেলা। এখানে সবুজাভ চা বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট রয়েছে। সবগুলো স্পটই শহরের বাইরে অবস্থিত। তবে শহরের মধ্যে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, দেবদারু, নাগকেশর ইত্যাদি ফুল পর্যটক ও স্থানীয়দের তনোমন ভরিয়ে দেয়। এর সাথে গত বছর থেকে যুক্ত হয়েছে ‘ক্যাসিয়া জাভানিকা’ ফুল। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ জাতের গাছগুলো সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলেই বেশি দেখা যায়। কিন্তু শ্রীমঙ্গলে গাছটির অবস্থান শহরের অনেকটা কেন্দ্রস্থলে। এখন স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরাও গ্রীষ্ম মৌসুমে ফুলটি দেখতে ভিড় জমান কলেজ রোডে। গাছটি রোপন করে আমাদেরকে ক্যাসিয়া জাভানিকা ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শিক্ষক ও বৃক্ষপ্রেমি তারিক হাসানকে। আমার জানামতে এ অঞ্চলে এ গাছটি দুর্লভ।’