Advertisement
কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্বেও মোটা অংকের টাকার বিনিময় অধ্যক্ষ নিয়োগ।
বরগুনা প্রতিনিধি:
কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্বেও আমতলী উপজেলার ইউনুস আলী খাঁন ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ জাকারিয়াকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মিজান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ জাকারিয়ার বিএ পাশের দুই সনদ রয়েছে। একই সনদ বাংলায় তৃতীয় বিভাগ এবং ইংরেজীতে দ্বিতীয় বিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য মোহাম্মদ জাকারিয়া দ্বিতীয় বিভাগের সনদটি তার নয় বলে দাবী করেছেন।
মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ইউনুস আলী খাঁন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে বেশ অনিয়ম হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকারিয়া কিভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়েছেন তা জানতে তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার ইউনুস আলী খাঁন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালে ২৫ ডিসেম্বর একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। অধ্যক্ষ পদে ৫ জন আবেদন করেন। অভিযোগ রয়েছে কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও ওই কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মিজান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। ইউনুস আলী খাঁন ডিগ্রী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। কিন্তু কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির বিষয়টি গোপন রেখে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ দেখিয়ে সভাপতি জাকারিয়াকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের পরিপত্রে উল্লেখ আছে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে প্রার্থীকে অবশ্যই বিএ ও এম পাশের দ্বিতীয় শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু মোহাম্মদ জাকারিয়ার বিএ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ। এছাড়াও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি প্রয়োজন কিন্তু কলেজ সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান তা দেননি। অপর দিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ জাকারিয়ার ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে বিএ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু ওই একই বছরে তার আরেকটি ইংরেজি সনদ রয়েছে। ওই সনদে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে উল্লেখ আছে। অবশ্য মোহাম্মদ জাকারিয়া তার ইংরেজী সনদের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, বিধি মোতাবেকই আমাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে বিএ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু অপর ইংরেজির বিএ পাশের সনদটি আমার নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা উপেক্ষা করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মিজান গোপনে অধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ জাকারিয়াকে নিয়োগ দিয়েছেন। তারা আরো বলেন, জাকারিয়ার বিএ পরীক্ষা পাশে দুইটি সনদ। একটি বাংলায় আরেকটি ইংরেজিতে। বাংলা সনদে তৃতীয় বিভাগ আর ইংরেজি সনদে দ্বিতীয় বিভাগ। তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
কলেজের বর্তমান সভাপতি প্রকৌশলী মামুন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। মোহাম্মদ জাকারিয়াকে অধ্যক্ষ পদে আমি নিয়োগ দেয়নি। আগের সভাপতি তাকে কিভাবে নিয়োগ দিয়েছেন তা আমার জানা নেই? তবে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মিজানের মুঠোফোনে (০১৭১১৩৫২০২১) যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। নির্ভরযোগ্য সুত্র জানাগেছে, ৫ ই আগষ্টের পর থেকে তিনি (মিজান) পলাতক রয়েছেন।