lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩
Last Updated 2023-10-05T10:27:16Z
জাতীয়

ঢেঁকি এখন শুধুই অতীতের গল্প

Advertisement


জহিরুল ইসলাম যশোর সংবাদদাতা :


ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে আছি, তারই পরিক্রমায় কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি। ও বউ ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পার দিয়া, এক সময় ঢেঁকির পাড়ে পল্লীবধূদের এমন গান বাংলার গ্রামীন জনপদে সবার মুখে মুখে শুনা যেতো। ধান থেকে চাল, চাল থেকে আটা। এক সময়ে চাল আর আটা তৈরির  একমাত্র মাধ্যম ছিল এ ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ধুম পড়তো নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরীর। আর শীতের পিঠা তৈরীর উৎসব চলতো গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে। তবে কালের পরিক্রমায় প্রায় হারিয়ে গেছে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বাহী এই ঢেঁকি শিল্প। নতুন প্রজন্মের কাছে তো ঢেঁকি এখন একটি অচেনা শব্দ। বাস্তবে এখন ঢেঁকির দেখা মেলা ভার। কিছু  জায়গায় থাকলেও এর ব্যবহার এখন আর তেমন  একটা নেই। নব্বই দশকের পর থেকে ক্রমেই বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি। মানব সভ্যতার প্রয়োজনেই ঢেঁকি শিল্পের আবির্ভাব ঘটেছিল। এখন আবার সেই মানব সভ্যতার জীবনকে আরও বেশি গতিময় করে তুলতে, আর আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ঢেঁকি এখন অনেকটাই বিলুপ্ত। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরলে একটি ঢেঁকিরও দেখা মেলে না। আধুনিকতার ছোয়ায় সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে ডিজেল-বিদুৎ চালিত মেশিন। গ্রামে গঞ্জে গড়ে উঠেছে ছোট বড় রাইস মিল। যার ফলশ্রুতিতে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢেঁকি ছাটা চাল ও চিড়া আজ আর নেই। এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না। ভোরের স্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় না ঢেঁকি ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ। চোখে পড়ে না বিয়ে-শাদি উৎসবে ঢেঁকিছাটা চালের ক্ষীর, পায়েস রান্না। অথচ আগে ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করায় কঠিন ছিল। এক সময় গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল। ধান ভাঙ্গা কল আমদানির পর গ্রামঅঞ্চল থেকে ঢেঁকির বিলীন হওয়া শুরু হয়। ফলে গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকিছাটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি শিল্পকে যুগের অনেকেই ঢেঁকি চেনে না। কালের পাতায় স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। যেখানে বসতি সেখানেই ঢেঁকি, কিন্তু আজ তা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে।


ঢেঁকিতে তৈরী করা আটা দিয়ে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতো পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ নানা ধরনের বাহারি পিঠা-পুলি। পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করা হতো নবান্ন উৎসব। গ্রামীণ জনপদ গুলোতে এখন বিরাজ করছে শহুরে আবেশ। তাই গ্রামে গ্রামে আর ঢেঁকি নেই, নেই পল্লীবধূদের মন মাতানো গান। কিছু জায়গায় নবান্ন উৎসব হলেও পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না। গ্রাম বাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি।


ঢেঁকি ছাটা চাল শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে গ্রামের শিশুদের জাউ তৈরী করে খাওয়ানো হতো। কিন্তু যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে ধান থেকে চাল, আটা তৈরীর একমাত্র মাধ্যম গ্রামীণ ঢেঁকি। আমাদের গ্রামাঞ্চল থেকে এখন ঢেঁকি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। কয়েক বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের বিত্তবানদের বাড়ীতে দেখা যেত ঢেঁকি। স্থানীয় প্রবিন ব্যক্তি আব্দুর রহমান সহ অনেকেই জানান, এখন ঢেঁকির পরিবর্তে আধুনিক ধান ভাঙ্গার রাইস মিলে চাল ভানার কাজ চলছে। কোনো কোনো স্থানে ডিজেলের মেশিন ছাড়াও ভ্যান গাড়িতে ইঞ্জিন নিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধান ভানা ও মাড়াই করছে। যার কারনে গ্রামের অসহায় ও অভাবগ্রস্থ মহিলারা যারা ধান ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা বিকল্প পথ বেছে নেওয়া ছাড়া অনেকে ভিক্ষা করে দিন অতিবাহিত করছে। কেউবা কাজ করছে অন্যের বাড়ীর ধান শুকানো।


ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষিবিদ মোঃ মাসুদ হোসেন পলাশ এর সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, ঢেঁকি আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। যখন যন্ত্র চালিত ধান ভানা কল ছিল না তখন ঢেঁকির কদর ছিলো। আর তখনকার সময়ের মানুষের জন্য এই ঢেঁকি আবিষ্কারই ছিলো যথেষ্ট। 


এখন আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি হাস্যকর কিংবা অজানা। ভবিষ্যতে ঢেঁকি ইতিহাসের পাতায় পড়া ছাড়া বাস্তবে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। না হয় কোনো যাদুঘরের কোণে ঠাঁই পাবে নিজের অস্তিত্ব টুকু নিয়ে। তখন হয়তো আমাদের নতুন প্রজন্ম গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য থেকে একবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে আমাদের হারানো ঐতিহ্যগুলো নিয়ে প্রতি বছর বিশেষ মেলার আয়োজন করলে  বর্তমান প্রজন্ম গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও বেশি বেশি জানতে পারবে।