lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩
Last Updated 2023-03-28T05:54:05Z
আইন শৃঙ্খলা

নওগাঁয় আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃ ত্যু!

Advertisement

 

 

অন্তর আহমেদ নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

নওগাঁয় প্রতারণার অভিযোগে আটকের পর র‌্যাবের হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, আটকের পর নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে র‌্যাব জানিয়েছে, আটকের পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাকে র‌্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ওই নারীর নাম সুলতানা জেসমিন (৪৫)। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে জেসমিন নওগাঁ জেলা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

র‌্যাব জানায়, প্রতারণার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদে বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। শনিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে খাস-নওগাঁ মাঠে জানাজা নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। 

এর আগে গত বুধবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের মুক্তি মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। 

নিহত সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক বলেন, সে বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে র‌্যাবের ১০ থেকে ১২ জন তাকে আটক করে। দুপুর ১২টার পর জানা যায় তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর তাকে রামেকে নেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, শুক্রবার সকালে রামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হলেও মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার দুপুরের পর। তাকে কেন আটক করা হলো সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৫ (রাজশাহী) কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের জানান, সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পায় র‌্যাব। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র‌্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। কিন্তু আটকের পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে শুক্রবার রামেকে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মৌমিতা জলিল জানান, বুধবার দুপুরে র‌্যাবের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ওই রোগীর হৃদরোগ শনাক্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসায় দ্রুত রাজশাহীতে পাঠানো হয়।

অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই নারীর শরীরের কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো কিনা সেগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হয়নি। 

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফএম শামীম আহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, রামেকে সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পারেন মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকতের দাবি, মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তা মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র‌্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা সঠিক নয়।নিহত সুলতানার মামা নাজমুল হক বলেন, তার বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ কখনও করেননি। মৃত্যুর ঘটনায় পারিবারিকভাবে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।