Advertisement
সোহেল মিয়া,দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা নোয়ারাই-নরসিংপুর সড়ক।
হঠাৎ বৃষ্টিতে নরসিংপুর -নোয়ারাই সড়কের বিভিন্ন স্থানের পাঁকা রাস্তায় কাদা জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনা। এতে বিপাকে পড়েছেন সড়কে চলাচল করা পথচারী ও পরিবহনকর্মীরা। প্রতিনিয়তই ঘটে চলছে দূর্ঘটনা। গতকাল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত এই রাস্তায় ৩ টি মালবোঝায় পিকআপ ও ২টি সিএনজি দূর্ঘটনার স্বিকার হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুই উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এই ভাঙ্গা সড়ক দুইযোগ দরে সংস্কার না হওয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে পথ চলছেন ওই অঞ্চলের মানুষজন।
গত কয়দিনের হঠাৎ বৃষ্টিপাতে সড়কটির ভাঙ্গা গর্তগুলোতে কাদা পানিতে সড়কটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে ভরপুর এই রাস্তাটিতে শতাধিক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বৃষ্টির পানিতে গর্তে পুকুর সৃষ্টি হয়ে দিনে কয়েকটি দূর্ঘটনার হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় একাধিক গর্তে পরিনত হওয়ায়সহ গর্তের মাটি বের হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পর পড়ে থাকা মাটি কাদায় পরিণত হয়েছে। এতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও মোটরসাইকেল আরোহীরা পড়েছেন বিপাকে।
সজিব আহমদ নামের মোটরসাইকেল আরোহী বলেন,নোয়ারাই -নরসিংপুর রাস্তার বেহাল দশা। এই পাকা রাস্তার উপর মাটির স্তর পড়ে গেছে। বৃষ্টিবিহীন সময়ে ধুলাবালিতে মোটরসাইকেল চালানো দুষ্কর হয়ে গেছে। তারপর বৃষ্টিতে সড়ক এখন শতাধিক মরণ ফাঁদ হয়ে গেছে। কোন ভাবেই গাড়ি মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়া যায়না। আর যে রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যায়না সেই রাস্তা দিয়েতো সিএনজি,পিক-আপ চালানোর তো কোন কথানা।
জুয়েল আহমদ নামের এক সিএনজি চালক বলেন, বৃষ্টির পর রাস্তায় গাড়ি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এক রাস্তায় শতাধিক মরণ ফাঁদ। পাকা রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিণত হয়ে তা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। গতকাল সিএনজি চালিয়ে নরসিংপুর থেকে নোয়ারাই যাওয়ার পথে সামনের দিক থেকে আসা একটি পিকআপ গাড়ি চাকা পিছলিয়ে সড়কের নিচে চলে যায়। একটু অসাবধান হলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় মাটি রাস্তায় পড়ে রাস্তার যেমন দিন দিন ক্ষতি বাড়ছে তেমনি সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় দুর্ঘটনা ও বেড়ে চলছে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন,জেলা শহর সুনামগঞ্জ, বিভাগীয় শহর সিলেট ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নরসিংপুর ইউনিয়নবাসীর যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নরসিংপুর-নোয়ারাই সড়কটি। কিন্তু বিধি বাম! ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বর্তমান ডিজিটাল যুগে দেশব্যাপি যোগাযোগক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এ ক্ষেত্রে আমরা রয়েছি অনেক পিছিয়ে। আমরা আলোর নিচে আজ অন্ধকারে বসবাস করছি। আমাদের দূ:খ-দূর্দশা দেখার কেউ নেই। নির্বাচন এলেই উন্নয়নের নামে শুধুমাত্র আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক আজ আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়ির চালকদের ঘামঝরা শ্রমে অর্জিত অর্থে স্থানে স্থানে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে যানবাহন চলাচলে রাস্তাগুলোকে টিকিয়ে রাখছেন গত একযুগ ধরে। এদিকে সাম্প্রতিক স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ওই সড়কের সিঙ্গেরকাচ-বন্দরগাঁও এলাকায় বিশালাকার ভাঙনে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু এ অবস্থায় বসে থাকতে পারেননি গাড়িচালকরা। তাদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তথায় সম্প্রতি একটি বাঁশ-কাঠের ব্রিজ তৈরি করে আপাতত চলাচলের পথ সুগম করা হয়। কিন্তু নিয়মিত ভাঙাচোরা ওই রাস্তায় এসব জোড়াতালিতে এভাবে আর ক‘দিন চলবে এটাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ? কেননা সুদীর্ঘ দুই দশক ধরে ভাঙতে ভাঙতে রাস্তাটি এখন খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় মালামাল পরিবহন করাতো দূরের কথা, সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল করাটাই দূষ্কর হয়ে পড়েছে। তাই জনভোগান্তি লাঘবে যোগাযোগক্ষেত্রে অনুকুল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত নরসিংপুর-নোয়ারাই সড়কটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সদকায়ে জারিয়া হিসাবে দ্রুত পূর্ণ নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।