Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ববানপুর গ্রামের স্কুলছাত্রী সোহানা আক্তারকে (১৪) অপহরণের ১০ দিন পরও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অপহৃতা স্কুলছাত্রী ওই গ্রামের কদর মিয়ার কনিষ্ট সন্তান ও মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অপহৃতার পরিবারের অভিযোগ, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহানা আক্তার কনিষ্ট। তার দুই ভাই প্রবাসী। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তারা স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন। নিজ বাড়িতে বৃদ্ধ মা, বাবা আর সোহানা ছাড়া আর কেউ নেই। এ সুযোগে একই গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে রবিউল ইসলাম (১৯) স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই সোহানা আক্তারকে উত্যক্ত করতো। এ বিষয় নিয়ে সোহানার পরিবারের পক্ষ থেকে রবিউলের পরিবারের কাছে একাধিকবার বিচার দেওয়া হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর সকালে সোহানা বাড়ি থেকে স্কুলে যাবার পথে মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যাওয়া মাত্র রবিউল তার বাবা আব্দুল খালিক, শহরশ্রী গ্রামের আরজত মিয়ার ছেলে রুমান মিয়া, মৃত মনুই মিয়ার ছেলে মো. হারুন মিয়ার সহযোগিতায় সোহানা আক্তারকে জোরপূর্বক সিএনজি অটোরিকশায় করে অপরহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রবিউলের পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে অপহরণ ঘটনার কথা স্বীকার করে এবং বিয়ের মাধ্যমে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে অপহৃতা সোহানার পরিবার রাজি না হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা জুমন আহমদ ওয়াহিদুল বলেন, ‘আমি খবর পাইছি মাত্র ১৪ বছর ৮ মাস বয়সী সোহানা নামের মেয়েটা স্কুলে যাবার পথে অপহরণ হইছে। এরপর সবুজ এবং রোমান নামের দুই ব্যক্তি অপহৃতা মেয়েটির বাড়িতে এসে প্রস্তাব দেয় যা হবার হয়েছে এখন বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাদের জানায় মেয়েটিকে নিয়ে আসা হোক। কিন্তু তারা বিয়ের ব্যবস্থা করা ছাড়া মেয়েটিকে মুরব্বিদের সামনে হাজির করতে অপরাগতা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে মামলা হলেও মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারে পুলিশ তৎপর নয়। আসামিরা বাজারে মাঝে-মধ্যে আসলেও পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। জানি না মেয়েটি জীবিত আছে না তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
অপহৃতার বড় ভাই মো. মিলাদ মিয়া বলেন, ‘আমরা দুই ভাই দেশের বাইরে থাকি। দুই বোন স্বামীর বাড়িতে। আমার ছোট বোন আর বৃদ্ধ বাবা-মা আমাদের নিজ বাড়িতে থাকেন। ২১ সেপ্টেম্বর সকালে স্কুলে যাবার পথে রবিউল ও তার সহযোগিরা আমার ছোট বোনকে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। আমরা ঘটনার পরপরই থানার আশ্রয় নেই। তারা ২৭ সেপ্টেম্বর মামলা রেকর্ড করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল আসামি গ্রেপ্তার কিংবা আমার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট বোনকে উদ্ধার করতে পারেনি। থানা থেকে কোন পদক্ষেপ তারা নেয়নি। আসামিরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কোন পদক্ষেপ দেখি না। আমাদের বোনকে উদ্ধার করাও হচ্ছে না। সে জীবিত আছে না তাকে মেরে ফেলা হয়েছে তাও জানি না। পুলিশের কাছে আমাদের করজোরে দাবি দয়া করে আমাদের বোনকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
সোহানার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক। তার জন্ম ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সে মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার স্কুল সনদ ও জন্ম নিবন্ধন অনুসারেও তার বয়স ১৪ বছর ৮ মাস। তাকে স্কুলে যাবার পথে অপহরণের পর এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ-খবর নাই। সে জীবিত আছে না মারা গেছে জানি না। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন।’
অপহরণকারী রবিউল ইসলাম ও অপহরণ মামলার অন্যান্য আসামিদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলছাত্রী অপহরণের পর তার পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারে আমরা গুরুত্বের সাথে কাজ করছি। আশা করছি দ্রæততম সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধার করতে পারবো।’


