lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
Last Updated 2025-07-28T16:03:07Z
ব্রেকিং নিউজ

শ্রীমঙ্গলে হুমকির কারনে বাড়ি ছাড়া সন্ত্রাসী হামলায় আহত তিন ভাই ও তাদের পরিবার

Advertisement


  

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

‘আমরা তিন ভাই খুবই দরিদ্র মানুষ। দিন আনি দিন খাই। সন্তানাদি নিয়ে খুবই কষ্টে কাটছে আমাদের জীবন। সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামে সরকারি খাস খতিয়ানের জমিতে পরিবারসহ বসবাস ও ফসল ফলিয়ে এবং অন্যের ফলদ বাগানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে কোন রকম জীবন যাপন করছি। আমাদের চাচাতো ভাই মাসুক মিয়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের তিন ভাইকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে তা দখলে নিতে পায়তারা চালিয়ে আসছিল। এরইমধ্যে আমাদের চাচাতো ভাই মাসুক মিয়ার পালিতপুত্র সুমন মিয়া আমাদের বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করে। এ ঘটনা নিয়ে গত ২১ মে স্থানীয়ভাবে বিচার-শালিস হয়। এই ক্ষোভে এবং আমাদের বাড়িঘর, জায়গা-জমি, ফসল দখলে নিতে গত ২৫ মে দুপুর ২টার দিকে মাসুক মিয়ার নেতৃত্বে সুমন মিয়া, কাওসার মিয়া, আলাউদ্দিন মিয়া ও আনোয়ার মিয়া আমাদের তিন ভাইকে ধারলো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আমরা সিলেট ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে চিকিৎসায় থাকাবস্থায় মাসুক মিয়ার লোকজন আমাদের বসতবাড়ি ও ফলদ বাগান দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে আমরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে রয়েছি। বাড়িতে গেলে মাসুক মিয়া ও তার লোকজন আমাদের প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। পরিবারসহ পালিয়ে থাকায় এবং হুমকির কারনে আমার ভাই আব্দুস সালাম একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। ২৮ জুলাই সকালে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কান্না জড়িত কণ্ঠে এ অভিযোগ করেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪ নম্বর সিন্দুরখান ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রাম জাম্বুরাছড়ার বাসিন্দা দিনমজুর আব্দুর রহিম।

সরজমিনে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রাম জাম্বুরাছড়া গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম, আব্দুল মতিন ও আব্দুর রহিমের পাশাপাশি তিনটি বাড়ির মাটির দেওয়ালের ঘরগুলো তালাবদ্ধ। তিনটি বাড়িই সুনশান নিরব। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ওই বাড়িগুলোতে আসতে পারছেন না তিন ভাই ও তাদের পরিবার-পরিজন। 

ঘটনার বর্ণনা করে আব্দুস সালামের স্ত্রী কামারুন নেছা বলেন, ‘গত ২৫ মে দুপুর ২টার দিকে মাসুক মিয়ার নেতৃত্বে সুমন মিয়া, কাওসার মিয়া, আলাউদ্দিন মিয়া ও আনোয়ার মিয়া আমাদের বসতঘরের সামনে এসে আমার ভাসুর, স্বামী, দেবরদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় আমার দেবর আব্দুর রহিম তাদের গালিগালাজ না করতে বলা মাত্র তারা তার উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় তার মাথা, বাম হাত, উরুসহ পুরো শরীর রক্তাক্ত জখম হয়। তাকে হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে আমার স্বামী আব্দুস সালাম ও ভাসুর আব্দুল মতিন এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালানো হয়। তারাও রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হন। তাদের সম্মিলিত আত্মচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদেরকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সবাইকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর বাড়িতে আসলে মাসুক মিয়ার বাধার কারনে আমরা তিন পরিবার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারিনি। বাড়িতে প্রবেশ করলে আমাদের মেরে ফেলা হবে বলে মাসুক মিয়া তার লোকজন হুমকি প্রদান করলে আমরা জীবনের নিরাপত্তার কারনে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। এরই মধ্যে রাগে ক্ষোভে আমার স্বামী আব্দুল মতিন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে সিলেট নিয়ে চিকিৎসা করাই। এখনো তিনি স্বাভাবিক হতে পারছেন না। ঘটনার পর আমরা চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকাবস্থায় মাসুক মিয়া বাদি হয়ে আমাদের নামে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেন। আমরাও পরবর্তীতে মাননীয় আদালতে মামলা দায়ের করি। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতার কারনে আত্মগোপনে রয়েছি। আমরা দখলবাজাদের কবল থেকে আমাদের বাড়িঘর ফেরত চাই। নিজের বাড়িতে শান্তিপূর্ণ বসবাসের সুযোগ চাই।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় মুরব্বি মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘আব্দুর রহিমদের বাড়িতে গত ২১ মে আব্দুল মতিনের স্ত্রীর সাথে মাসুক মিয়ার পালিতপুত্র সুমন মিয়ার পরকিয়ার বিষয় নিয়ে বিশাল বিচার-শালিস হয়। সেখানে আমাদের গ্রামের মুরব্বি আবুল কালাম, আবুল মিয়াসহ ছাড়াও হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও মুরব্বিগণ উপস্থিত ছিলেন। এর জের ধরে এবং সালাম, মতিন, রহিমের বাড়িঘর দখল করতে গত ২৫ মে মাসুক মিয়া তাদের তিন ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এখন মাসুকের তারা বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না। স্থানীয়ভাবে আমরা মুরব্বিরা চেষ্টা করেও মাসুকের কারনে ব্যর্থ হয়েছি। মাসুক কারো কথা মানছে না।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাসুক মিয়ার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তার বড় ছেলে আল আমীন বলেন, ‘আমরা কারো উপর হামলা করিনি। তারাই কুপিয়ে আমার বাবাকে আহত করেছে। আমার বাবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে আমরা শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করি। আমরা কাউকে তাদের বাড়িঘরে আসতে বাধা দিচ্ছি না বা কারো বাড়িঘর দখল করিনি। তারা কেন বাড়িতে আসছেন না তা তারাই বলতে পারবেন। এটি আমাদের জানা নেই। আমরা থানায় এবং তারা কোর্টে মামলা করেছেন। আমরা কোর্টেই ফয়সালা হোক তা চাই। সামাজিকভাবে বসার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।’

৪ নম্বর সিন্দুরখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন আরাফাত রবিন বলেন, ‘মাসুক মিয়া কারো কথা শুনেন না। সে তার তিন চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করলো, একজনের চোখ অন্ধ করে দিয়েছে, আরেকজনের হাত কেটে ফেলেছে, অন্যজনের মাথায় গুরুতর আঘাত। এটি আইনের বিষয়। মামলা হয়েছে, আইনে যা হবার হবে। তবে তাদের বাড়ি ফিরতে মাসুক মিয়া বাধা দিচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি গ্রাম্য পঞ্চায়েতদের নিয়ে কি করা যায় তা দেখছি।’