lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
Last Updated 2025-07-10T05:25:26Z
জাতীয়

খালেদা জিয়াকে একটি পার্শ্ববর্তী দেশ বিষক্রিয়া দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল: এম নাসের রহমান

Advertisement


 


ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেছেন, "বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এই পার্শ্ববর্তী দেশ বিষক্রিয়া দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এটা কিন্তু সত্য ঘটনা। এটা আরেকটা পরাশক্তি ধরে ফেলছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর কারারক্ষী হিসেবে ওই জেলখানায় ঢুকেছিল এক বছর যাবত। সেনাবাহিনীর মেজর র‌্যান্কের। তার কাজ ছিল ইযরাইল যেভাবে ইয়াসির আরাফাতকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলছিল, ওই সেইম বিষ দিয়ে এপ্লাই করার। তা ধরা পড়ে যায় এক মাস যাওয়ার পর পরেই। কিন্তু ওই বিষক্রিয়ায় কিছু প্রক্রিয়া হয়ে যাওয়াতে বেগম জিয়ার লিভারে অ্যাফেক্ট হয়ে যায়। এই হাসিনা ডাইনি বলেছিল, যারা মদ খায় তাদের লিভারসিরোসিস হয়। অথচ এই হাসিনা বিষ খাইয়ে ছিল বলেই ম্যাডামের লিভার সিরোসিস হয়েছে। আমি জানিনা আল্লাহ তায়ালা কোন আটটা দোজখ টিক রাখছেন হাসিনার জন্য। হয়তো হাসিনার জন্য নবম দোজখ ঠিক করবেন। এই বিষক্রিয়ার জন্য বেগম জিয়া শারীরিকভাবে দুর্বল হয়েছেন। নইলে তিনি এতটা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। এখন লন্ডনে ভাল চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি অনেকটা ভাল এবং সুস্থ আছেন।" মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতে লন্ডনে হোয়াইট চ্যাপল মাইদা গ্রীল হলরুমে যুক্তরাজ্যস্থ মৌলভীবাজার জেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জেরিসের সভাপতিত্বে এবং সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী ও সফিকুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল কদ্দুস চৌধুরী শায়েস্তা, বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, রাজনগর উপজেলা বিএনপির নব নির্বাচিত সভাপতি নুরুল ইসলাম শেলুন ও যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী ফোরাম মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি শাহ সাইফুল আখতার লিখন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আলহাজ অদুদ আলম, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক সভাপতি নাসিম আহমেদ, কেন্ট বিএনপির সভাপতি রুহুল ইসলাম রুলু, মৌলভীবাজার সদর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আখতার সেকুল, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী ফোরামের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন আহাদ প্রমুখ।

নাসের রহমান আরও বলেন, "অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর দেশটা এ পর্যায়ে এসেছে। আগামী নির্বাচনে তারেক রহমান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নয়া রাজনৈতিক দিগন্তের দিকে অগ্রসর হবে। তবে এ কথা ভুলে গেলে হবে না, যার সেক্রিফাইসের জন্য আমরা এ দেশটায় নতুন স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি তিনি হলেন দেশনেত্রী মাদার অব ডেমেক্রেসী বেগম খালেদা জিয়া। জীবনে সবচেয়ে বড় সেক্রিফাইজ তিনি করেছেন। আমরা কথায় কথায় সবাই ত্যাগী ত্যাগী নেতা বলে থাকি অথচ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে তিনি যে ত্যাগ শিকার করেছেন তা ভুলার মতো নয়। গত সাড়ে পনের বছর হিটলারের পর বোধ হয় সবচেয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের অধীনে আমরা ছিলাম। এ রেজিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সবচেয়ে বেশী জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী। সবচেয়ে বেশী জেলে গেছেন বিএনপি নেতাকর্মী। সবচেয়ে বেশী মামলা খেয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী। সবচেয়ে বেশী গুমের শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী। খুনের শিকার হয়েছে বিএনপি। অথচ বাচ্চাদের একটা দল বলে মাত্র তিন সপ্তাহের একটা আন্দোলন করে তারা নাকি হাসিনাকে সরিয়ে দিয়েছে? এটা কি হয়? কোনও ইতিহাসে ঘেঁটে পাবেন না। এর প্রেক্ষাপটটা সৃষ্টি করছে কে? বিএনপি। একটা বিষয়ে সারাদেশের মানুষ একাট্টা ছিল, সেটা ছিল হাসিনার পতন। তখন সময় ছাত্রদের এ আন্দোলন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন এ আন্দোলনে বিএনপি সম্পৃক্ত নয়। মহাসচিবের এ কথাটা বলা ছিল নিছক কৌশল মাত্র। এই যে, চৌদ্দশ মানুষ আন্দালনে মারা গেছেন, এর মধ্যে বিএনপিরই ৪২৫ জন মারা গেছেন। যাদের বেশীরভাগই ছাত্রদল ও যুবদলের মারা গেছে। আর পাঁচটা ছেলে সামনে এসে আন্দোলন করে হাসিনাকে সরিয়ে দিয়েছে, এ কথাটা কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? এই হাসিনাকে সরানোতে সাড়ে পনের বছর বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে বহু ত্যাগ তিতিক্ষা জীবন দিতে হয়েছে। আমরা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিএনপি ঢাকায় শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে প্রায় সাত লাখ মানুষ নিয়ে বিশাল জনসভা করেছি। এর পরেরদিনই ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়েছিল। সেদিনের অবরোধে আমরা নেতাকর্মী নিয়ে গদা হাতে নিয়ে রাজপথে ছিলাম। পুলিশ আমাদের গলির ভিতর দৌঁড়ানি দিয়েছে। এ ৬২ বছর বয়সে আমরাও পুলিশকে গদা নিয়া দৌঁড়ানি দিয়েছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াকু সৈন্য হয়ে আমরা মাঠে ময়দানে দাঁড়িয়েছি, এখন কিছু ভূয়া লোকেরা নিজেদের লড়াকু সৈন্য বানাচ্ছে। বিএনপি সাড়ে পনের বছর আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তৈরীর কারণেই তিন সপ্তাহের ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে হাসিনা বিদায় নিয়েছে।"

পাঁচই আগস্ট ভারত থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি উল্লেখ করে  নাসের রহমান বলেন, "আমরা একটা নতুন বাংলাদেশে আসছি। নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। একাত্তর সালে সোজা বাংলায় বলি, আমরা পাকিস্থান থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি। আর ২০২৪ সালে পাঁচই আগস্ট সোজা বাংলায় কোনও সন্দেহ ছাড়া ভারত থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি। এটা নিয়ে যদি কেউ তর্ক করে সে মূর্খের বাচ্চা। সোজা কথা ভারত থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা। অনেকেই বলে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আমিও সেটা মনে করি। ভারত থেকে আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। আজকে ১১ মাস আমরা পার হয়েছি। কিছু টানাপোড়েন গেছে। শেষ পর্যন্ত আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ৮ থেকে ১২ তারিখের ভেতরে যদি সব ঠিকঠাক থাকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই নির্বাচনটা হবে ব্যতিক্রমী নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগতো নাই। আমরা সিলেটী ভাষায় বলি তারা গেছে, গাতর তলে। আওয়ামীলীগ এখন গাতর তলে। আওয়ামী লীগের দুইটি বৈশিষ্ট্য আছে। এর একটা হল তাদের হায়া লাজ শরম নাই, আর আরেকটা হল তাদের অনুশোচনা নাই। হায়া শরম যদি না থাকে তাহলে অনুশোচনা এখানে বিষয় নয়। এ দুইটাই আওয়ামী লীগের চরিত্রে নাই। আর যখন এ দুইটাই নাই এদেরকে মানুষ হিসেবে কনসিডার করা যায় কিনা এটা ভাবার বিষয়। এ রেজিম শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশুসহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এখন একটা ইসলামী দল তারা খুব সোচ্চার। এ দলের নেতা সকালে এক কথা বিকেলে আরেক কথা পরেরদিন আরেক কথা বলেন। তাদের বুঝা মুশকিল। ভাবখানা এমন ক্ষমতাটা যেন তাদের কাছে চলে গেছে। কারণ সে দলের অ্যাসসিস্টেন্ট জেনারেল বলে তারা ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে। সবচেয়ে বেশি নাকি তারা নির্যাতিত হয়েছে। তাদের সেক্রেটারী জেনারেল বলে তার দল ক্ষমতা গ্রহণে প্রস্তুত। তাহলে বিএনপি কি সাড়ে পনের বছর ঘাস কেটেছে? বিএনপির ঘাঢ়ের ওপরে বসে এমপি পেয়ে মন্ত্রীত্ব পেয়ে এখন বলে তারা না কি ক্ষমতা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। আরেকটা দল আছে, বরিশাল থেকে আসছে। চরমোনাই পীর, তাঁকে চাবি মেরেছে পিছন থেকে। তার কাজ হল বিএনপিকে গালি দেয়া। একসময় শেখ হাসিনার দালাল ছিল। এখন বিএনপিকে গাইললায়। তার পাকা ধানে কি বিএনপি মই দিয়েছে? ওই একটা দল চাচ্ছে সব ইসলামী দলকে একাট্টা করে বিএনপির বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর। অথচ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে এরা সবাই বিএনপির সঙ্গে ছিল। তখন বিএনপিকে কেউ গালি দেয়নি।"

পি আর সিস্টেম নিয়ে নাসের রহমান বলেন, "সবকিছু ঠিকঠাক, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন নতুন করে তারা দাবী তুলছে পি আর সিস্টেম। এই পিআর সিস্টেম পৃথিবীতে দুইটা দেশে হয়। একটা হল জার্মানি আরেকটা হল ইযরাইল। কোন সংখ্যাগরিষ্ট দল নাই। ইযরাইলের নেতানিয়াহু ১২০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩২ সিট নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী। কট্টরপন্থীদের নিয়ে মিলে ক্ষমতায় থাকার জন্য জগাখিচুরী সরকার প্রতিষ্ঠিত। আর জার্মানিতে ইলেকশন হওয়ার পর একটা গর্ভমেন্ট ফর্ম হতে মিনিমাম সময় লাগে দুই মাস। দর কষাকষি চলতে থাকে। ১১ দল বলে ১৫ আনা দেয়া  লাগবে। এটা কেউ সহ্য করবে? পি আর সিস্টেমে রুল অব দ্য মেজরটি। যারা মেজরটিকে ভোট দিয়েছে তার কোন গুরুত্ব নাই। তখন জনভিত্তিহীন দল তখন সে দলও ভাগ বসাবে।"

নাসের রহমান বলেন, "২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আয়োজনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে একটি মানবন্ধনকে বানচাল করার জন্য আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের গোন্ডারা ইট পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল। সেদিন আমার চোখের নীচে পাথরের চোট লেগে রক্তাক্ত জখম হয়েছিল।"

মতবিনিময় সভায় প্রবাসী নেতারা বিভিন্ন দাবী দাওয়া তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিল শমসেরনগর বিমান বন্দর চালুকরণ, ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে স্পেশাল ট্রেন চালু, বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও মৌলভীবাজারে মেডিকেল কলেজ স্থাপন।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কার্ডিফ বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা সালেহ লিটন, সোয়ানসি বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলান আহমদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মামুন, কানাডা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুহিন আহমদ, যুক্তরাজ্য কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নুর বক্স আহমদ, যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজল হোসাইন, জাতীয়তাবাদী ফোরাম যুক্তরাজ্যর সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আহমদ, ওল্ডহাম স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ মো. রায়হান, যুক্তরাজ্য যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিলাদ হোসেন রুবেল, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী ফোরাম শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি মো. মহসিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম সামাদ, জাতীয়তাবাদী ফোরাম মৌলভীবাজার জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী তৈমুর, যুব ফোরামের সভাপতি রাজুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কাঞ্চন সাগর, জাতীয়তাবাদী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ রুমেল আহমদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রাহাত আহমদ প্রমূখ।