lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
Last Updated 2025-07-26T16:57:22Z
জাতীয়

বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না: নাহিদ ইসলাম

Advertisement


 


ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমাদের অনেক দাবি ছিল। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্নকে নির্বাচনের সাথে একমাত্র দাবিতে রূপান্তর করে ফেলা হয়েছে। আমরা নির্বাচন চাই। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার শক্তি। কিন্তু বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে। এই নির্বাচনকে জনগণ গ্রহণ করবে না। ফলে বিচার সংস্কারে যতটুকু আমরা এগিয়েছি তার পক্ষে ঐক্যমত হয়ে আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।’

পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সেই জুলাই-আগস্ট থেকে এই জুলাই আগস্ট পর্যন্ত একবছর হয়ে গেছে। আমরা বলেছিলাম একটি নতুন বাংলাদেশ লাগবে, একটি নতুন বন্দোবস্ত লাগবে। পুরনো সিস্টেমে, পুরনো আইনে আমরা আর এই বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেবো না। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরে দালাল শক্তি আবারও চেষ্টা করছে পুরনো সিস্টেমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছে, আমাদের বোনেরা  নির্যাতিত হয়েছে। আমরা আর বাংলাদেশকে সেই পুরানো রূপে ফেরত যেতে দেবো না। বিচার, সংস্কার এবং একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আকাঙ্খা ছিল আকাশচুম্বি। অভ্যুত্থানে তরুণরা কর্মসংস্থানের দাবিতে রাজপথে নেমেছিল। বাংলাদেশের জনগণ অর্থনৈতিক বৈষম্যবিলোপের দাবি, মানবিক মর্যাদা ও নিজেদের স্বাধীনতার জন্য রাজপথে নেমেছিল। আমরা সেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পেলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের দাবি এখনও পুরণ করতে পারি নাই।’ তিনি শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড় পয়েন্টে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। পদযাত্রাটি বেরীরপাড় পয়েন্ট শুরু হয়ে শহরের কুসুমবাগ, সেন্ট্রাল রোড, চৌমুহনা পয়েন্ট, কোর্ট রোড, শাহ মোস্তফা রোড হয়ে পুনরায় বেরীরপাড় পয়েন্টে এসে পথসভায় অনুষ্ঠিত হয়।

পথসভায় এনসিপির আহবায়ক আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি আমাদের একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকারের কথা লেখা থাকবে। বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক ১৯৪৭ এর আজাদির লড়াই, ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে। এই সংবিধানে সকল জাতি ও ধর্মের সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু এই সংবিধানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি। ১৯৭২ এর সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্নগোষ্ঠী রাজপথেনেমেছে। ৭২ এর সংবিধান ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, স্বাধীনতা সংগ্রামের আকাঙ্খাকে নষ্ট করে মুজিববাদী সংবিধান প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত। আমরা সেই চক্রান্তের মধ্যে ৫৪ বছর ছিলাম। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই চক্রান্ত থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই।’

চা শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মৌলভীবাজারে বাংলাদেশের সর্বাধিক চা বাগান রয়েছে। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজারের যে সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার আমরা কখনো করতে পারি নাই। মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা কয়েকদিন পরপরই ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন করেন। শ্রীলংকায় চা শ্রমিকরা সাড়ে পাঁচশত টাকা মজুরি পায়। ভারতে চারশত টাকার মতো মজুরি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে চা শ্রমিকরা ১৭৯ টাকা মজুরি পায়। ১৭৯ টাকায় একজন শ্রমিক কিভাবে তার দিনযাপন করবে, কিভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ও পরিবারের ভরণপোষণ করবে? আমরা চা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’

পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘গত জুলাইয়ে আমাদের হাজারো ভাই বোনকে হাসিনার প্রশাসন, হাসিনার পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা খুন করেছে। আমাদের সেই শহীদ ভাইরা যে আকাঙ্খা থেকে জীবন দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই আকাঙ্খা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ থেকে ঘরে ফিরে যাবে না। আমাদের লড়াই ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লড়াই, আমাদের লড়াই বাংলাদেশে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই। বাংলাদেশের নানা প্রান্তের মানুষদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হয়। এই মৌলভীবাজারে যারা চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাদেরকে ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। আমাদের চা শ্রমিকরা, আমাদের রিকশা শ্রমিকরা, আমাদের ঠেলা শ্রমিকরা, মজুররা তাদের নিয়ে একটি একটি নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাবে, এমন এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লড়াই। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ বির্ণিমান করতে চাই এই বাংলাদেশে জবাবদিহীতার উর্ধে, প্রশ্নে উর্ধে কোন ব্যক্তি, কোন রাজনৈতিক নেতা, সরকারি আমলা, পুলিশ প্রশাসন, আর্মি থেকে কাউকে আমরা জবাবদিহীতার উর্ধে রাখতে চাই না। এই বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে তাদের সকলকে জনগণের কাছে পরিস্কার থাকতে হবে।’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘চাকরির জন্য তরুণ প্রজন্ম মাঠে নেমেছিল কিন্তু তাদের চাকরি হয় নাই। উপদেষ্টাদের বাড়ি হয়েছে, উপদেষ্টাদের সবকিছু হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল হয়েছে কিন্তু তরুণ প্রজন্মের জন্য কোন কিছু হয় নাই। আমরা তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে একই সাথে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। আপনারা আাদের সাথে রাজপথে থেকে শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে আপনারা শেখ হাসিনাকে ভারতে পালাতে বাধ্য করেছিলেন। যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই আন্দোলন শুরুর সময় আমাদের বড় একটি দাবি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ৫০ পার্সেন্টের কাছাকাছি যে তরুণ প্রজন্ম রয়েছে তারা যখন ইনভার্সিটিতে পড়াশোনা করে যখন একটি চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছিল সেই সময় খুনি হাসিনার বাহিনী বৈষম্য করে সব চাকরি আওয়ামী লীগকে দেবার ব্যবস্থা করেছিল। খুনি হাসিনা চলে গিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় নাই। সরকারি কোন শিক্ষার ব্যবস্থা বাংলাদেশে হয় নাই। সরকারি কোন চাকরির ব্যবস্থা বাংলাদেশে হয় নাই। আমরা আশা করেছিলাম জনে জনে চাকরি হবে কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরণের কোন ব্যবস্থা এখনো দেখতে পারছি না। আমরা তরুণ প্রজন্মের চাকরির দাবিতে, শেখ হাসিনা বিচার দাবিতে, নতুন সংবিধানের দাবি আমরা দেশের ৬৪ জেলায় যাচ্ছি। আগস্ট মাসের ৩ তারিখে আমরা সবাই ঢাকায় একত্রিত হবো।’

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ বলেন, ‘আমরা জুলাই পদযাত্রা শুরু করার পর দেশের মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছেন তা অভুতপূর্ব। আমরা দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনারা জানেন আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছি। এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল ধরণের শোষন, সকল ধরনের অসমতা বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি আমরা। ৫৪ বছর দেশের রাজনীতি কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিল। সেই বিভাজনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। কিছুদিন আগে এই মৌলভীবাজারে চা বাগানে চারজন শ্রমিক কাচা টয়লেটে পড়ে মারা গিয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এ্িসব শ্রমজীবি মানুষের পাশে দাঁড়ান, শ্রমিজীবি মানুষের দিকে আপনারা নজর দেন। আমরা রাজপথের মানুষ। আমাদের আহবায়ক নাহিদ ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ক্ষমতার মসনদ ছেড়ে রাজপথে নেমে আসতে হয়।’

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের একটি বছর পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার দেখছি না। গত কিছুদিন আগে মাইনস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় আমাদের ছোট ছোট সোনামনি মারা গেছে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এটি মানা যায় না। এটির সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা সংস্কার চাই। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি, নতুন সংবিধান চাই। যে সংবিধানে দেশের প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের কথা থাকবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী ফাহাদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মারুফ আল হামিদ, জাকারিয়া ইমন, মৌলভীবাজার এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক এহসান জাকারিয়া প্রমুখ।