Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে তাদের গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে গ্রেপ্তারকৃতদের মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মির্জাপুর ইউনিয়নের বৌলাশীর গ্রামের নিকুঞ্জ দাশের ছেলে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ এবং মির্জাপুর চা-বাগানের শংকর লোহারের ছেলে গোপাল লোহার।
জানা যায়, সমাজসেবা অধিদফর কর্তৃক বাস্তবায়িত চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এককালীন জনপ্রতি প্রতি চা-শ্রমিককে ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। উক্ত টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিতে উপকারভোগীদের হাতে প্রদান করার কথা। কিন্তু গত ১৩ জুন মির্জাপুর ইউনিয়নের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ ২৪ জন চা-শ্রমিকের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে উপকারভোগীদের হাতে টাকা না দিয়ে মির্জাপুর চা-বাগানের শংকর লোহারের ছেলে গোপাল লোহারের হাতে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে ২৪ জনের নাামে বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা প্রদান করেন। গোপাল লোহার ওই ২৪ জনকে জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। বাকি ৪৮ হাজার টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ এবং গোপাল লোহার পরস্পর যোগসাজসে আত্মসাৎ করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে একদিন পর গোপাল লোহার ১৭ জনকে ২ হাজার টাকা করে ৩৪ হাজার টাকা ফেরত প্রদান করেন। বাকি ৭ জনকে তাদের প্রাপ্য ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়নি। এরইমধ্যে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি মৌলভীবাজার জেলা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রশাসনের নজরে এলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পুলিশ সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে সৌরভ কান্তি দাশ এবং গোপাল লোহারকে আটক করে। পরে ওইদিন রাতে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মির্জাপুর ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. বশির মিয়া বাদি হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আটককৃত সৌরভ কান্তি দাশ এবং গোপাল লোহারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার (১৭ জুন) তাদের মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে মামলার বাদি মির্জাপুর ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. বশির মিয়া বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমি বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছি।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোয়েব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট-বড় ৪২টি চা বাগানের ১০ হাজার ৬৫০ জন চা-শ্রমিককে তাদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার টাকা করে এককালীন বছরে ৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এ টাকাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চা-শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। মির্জাপুর ইউনিয়নে ১৩ জুন ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ এবং মির্জাপুর চা বাগানের শ্রমিক গোপাল লোহার নামের একজন ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি অতীব গুরুত্বের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনায় আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চা শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক দুই জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার (১৭ জুন) মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’