Advertisement
হাজী জাহিদ,নরসিংদী:
নরসিংদীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে স্থানীয় এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার (১৬ জুন) আবুল কাশেম নামে সাংবাদিক নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর অনলাইনে একটি সাধারন ডায়েরি আবেদনে এ অভিযোগ পাওয়া যায়।
অভিযোগকারী স্থানীয় সাংবাদিক মো. আবুল কাশেম আলোকবালী গ্রামের আ. কাদির মিয়ার ছেলে। তিনি দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি আলোকবালী আব্দুল মান্নান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সদস্য ও নরসিংদী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত হুমকিদাতা আব্দুল কাইয়ুম আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে মো. শিশু মিয়ার ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। পেশাগতভাবে তিনি একজন বালু ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের দিলালপুর মৌজায় বালু মহলের ইজারা নিলেও ইজারার সীমানা পাড় হযে আরো কযেক কিলোমিটার দূর আলোকবালী নেকজানপুর ও গৌরিপুরার চর এলাকার মধ্যবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলন করতেন। তাছাড়া ইজারার শর্ত অনুযায়ী কাটিং ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার কথা থাকলেও তিনি তা না করে প্রতিনিয়ত একাধারে ১৫ থেকে ২০টি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু কাটতেন।
দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালীর নেকজানপুর ও গৌরিপুরার চর এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে অবৈধ চুম্বক ড্রেজার বসিয়ে মেঘনা নদী থেকে অবাধে উত্তোলন করে ছিলেন আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির এই সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম। তার এই অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকাবাসি বেশ কয়েকবার নৌকা যোগে নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে হাজির হয়ে মানববন্ধন করে এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে "নরসিংদীতে চুম্বক ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি কাটার অভিযোগ এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে " শিরোনামে দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকাসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে মাটি কাটা বন্ধের জন্য বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসক থেকে পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু বালু খেকো কাইয়ুম জরিমানা দেওয়ার পর পর প্রশাসনের লোক চলে আসা মাত্র আবার শুরু করে বালু কাটা। এ যেন চোর পুলিশ খেলা।
এদিকে কোনভাবেই বালুকাটা বন্ধ না হওয়ায় উপায়ন্ত না পেয়ে অবৈধ এই বালু কাটা বন্ধে ইউনিয়নবাসির পক্ষে হানিফ হোসেন মুন্না নামের এক ব্যাক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ওই রিটের তদন্ত করতে সোমবার নরসিংদী সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট সিনথিয়া হোসেন সরজমিনে এসে স্থানীয়দের বক্তব্য নিচ্ছিল। এসময় অনেকেই ভয়ে কিছু বলতে রাজি হচ্ছিল না। এমন অবস্থায় স্থানীয় ওই সাংবাদিক আবুল কাশেম এগিয়ে যান। তিনি তার করা দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদগুলোর নিউজ কাটিং সহকারি কমিশনার ভূমি সিনথিয়া হোসেনকে দেখান এবং সেই সাথে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু কাটার স্বাক্ষী দেন।
পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও বালুকাটার স্বাক্ষী দেওয়ার প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় সাংবাদিক আবুল কাশেমকে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন।
উল্রেখ্য, এই বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলাসহ অবৈধ ভাবে অন্যের জমি জবরদখল করে মাটি ভরাট করার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারী সাংবাদিক আবুল কাশেম বলেন, আমিও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এক সময় আলোকবালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দীর্ঘ আট বছর যাবত যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাকে গালমন্দসহ প্রাণনাশে হুমকি দেওয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আশা করি নরসিংদী জেলা বিএনপির অভিভাবক খায়রুল কবির খোকন ভাই বিষয়টি দেখবেন।
এই ব্যাপারে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম চৌধুরী বলেন, আমিও স্যোশাল মিডিয়ায় হুমকি দেওয়ার ভিডিও টা দেখেছি, সত্যিই এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি আমি আমার নেতা খায়রুল কবির খোকন সাহেবকে অবগত করবো।
এব্যাপারে কথা বলতে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুমে মোবাইলে কথা বললে সে জানান তিন মাস যাবত বালু কাটা বন্ধ তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।