lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫
Last Updated 2025-06-03T06:34:13Z
ব্রেকিং নিউজ

ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী থেকে কোটিপতি আওয়ামীলীগ নেতা মশিউর! নেপথ্যে তালতলী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল চুরি।

Advertisement


 

বরগুনা প্রতিনিধি:

বরগুনার তালতলীর ৩৫০ মেগাওয়াট আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে চলছে দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব। উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য  ও ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী শেখ মো. মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লুটের অভিযোগ উঠেছে। ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অবৈধভাবে মূল্যবান ধাতব সামগ্রী লুট করে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। সরকারি জমিতে তিনতলা বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে সোমবার শাহদাত হোসেন নামের একজন দুদক সমন্বিত কার্যালয় পটুয়াখালী অভিযোগ দিয়েছেন। শেখ মশিউর রহমানের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায়। তিনি শেখ পরিবারের সদস্য বলে তালতলীতে পরিচয় দিতেন। স্থানীয়দের আরো  অভিযোগ করেন, শেখ পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়েই তিনি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অধিকহারে লুটপাট করেছেন। 


এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য শেখ মশিউর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা লেখলে কি হয় তা আমার জানা আছে? আপনারা লেখেন, যেখান থেকে থামানো দরকার সে স্থান আমি জানি ও চিনি। কত সাংবাদিকইতো আমার বিরুদ্ধে লেখলে তাতেতো কিছুই হয়নি। আপনারাও লেখতে থাকেন। দেখি তাতে কি হয়? তিনি আরো বলেন, আমি কিভাবে টাকা আয় করেছি, তা আপনাদের জানার দরকার নেই। আমার আয়ের টাকা দিয়েই বাড়ি করেছি, জমি কিনেছি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল লুটের অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।


স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের চাচাতো বোনের ছেলে বড়বগী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি তানভির সিকদার জয়ের সঙ্গে মশিউর রহমান তার মেয়ে মীমকে বিয়ে দেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আত্মীয়তার সুবাদে রেজবির সঙ্গে গড়ে তুলেন সখ্যতা। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে মামা-ভাগ্নের প্রত্যক্ষ মদদে মশিউর আইসোটেক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মুল্যবান ধাতব সামগ্রী চোরাই পথে লুটপাট শুরু করেন।  স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মশিউর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তামার তার, লোহার পাইপ, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করেন। চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব মালামাল পাচার করে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত মশিউর বর্তমানে গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ একাধিক স্থানে জমি ও বাড়ির মালিক বনে গেছেন । মামা-ভাগ্নের ছত্রছায়া তাৎবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামলা লুট করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি শেখ মশিউর রহমান। রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার খুশি হয়ে তাকে ( শেখ মশিউর রহমান) তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটির সদস্য করেছেন। 


অনুসন্ধ্যানে বেড়িয়ে এসেছে, তালতলীতে মশিউর রহমানের বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ির নির্মাণ সামগ্রী—ইট, পাথর, সিমেন্ট, বালু, রড এমনকি টাইলসও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। সরকারি জমিতে অবৈধভাবে এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় শাহ আলম নামের একজন। ফ্যাসিস্ট  শেখ হাসিনার একজন এপিএসএর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়  উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার এবং তানভীর সিকদার জয়ের প্রত্যক্ষ মদদে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জব্বার, রাসেল ও আকবর আলী। আরো অভিযোগ রয়েছে তালতলী থানার তৎকালীন কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারও মদদ ছিল এই সিন্ডিকেটের পক্ষে। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে একাধিকবার অভিযোগ উঠলেও মশিউরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। বরং তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম ও কন্যা সুমী, মীম ও স্বপ্নের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য রয়েছে। দুদক অনুসন্ধান করলেই বেড়িয়ে আসবে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক নিকটাত্মীয়। ৫ আগষ্টের পরে তাকে একটু হিমসীম খেতে হয়। গত মার্চ মাসে  উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল সামগ্রীসহ মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন। একমাস হাজতবাসের পরে তিনি ছাড়া পান।


তালতলী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল বাজেটের প্রকল্প থেকে দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রাংশ লুটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলোর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। তদন্ত হলে প্রকল্পে দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা। শেখ মশিউর রহমানের এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় শাহদাত হোসেন নামের একজন গত সোমবার দুদক সমন্বিত কার্যালয় পটুয়াখালী অভিযোগ দিয়েছেন।


নিষিদ্ধ ঘোষিত তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের মুঠোফোনে (01711979095) বারবার যোগযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তার এক আত্মীয় জানান ৫ আগষ্টের পর থেকে তিনি গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।


এ বিষয়ে তালতলী আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক এম আর সামসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য  করতে রাজি হয়নি।


পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তানভির আহমেদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। যাছাই বাছাই করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, তদন্ত করে অভিযোগ ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ মত ব্যবস্থা নেয়া হবে।