lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
Last Updated 2025-06-06T03:44:24Z
ব্রেকিং নিউজ

ঈদের টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারের কটেজ, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের শতভাগ বুকিং সম্পন্ন

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি। দীর্ঘ এই ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণ করবেন অনেক ভ্রমণপিপাসু। দেশের পর্যটন নগরী ও চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে এবার লক্ষাধিক ভ্রমণপিপাসুর আগমন ঘটবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় এবার সর্বাধিক ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসবেন এটি নিশ্চিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক হিসেবে যারা আসছেন তাদের বরণে পুরো প্রস্তুত হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতরা।  

জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় আড়াই শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে দেড় শতাধিক। বাকিগুলো জেলার বাকি ছয় উপজেলায়। এসব হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ঈদের দিন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত প্রায় শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। 

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলায় রয়েছে উঁচু নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো ৯২টি চা বাগান। এছাড়া এ জেলার মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-কমলগঞ্জ উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রপাত, সীতাপ জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, পদ্মছড়া লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, আদমপুর সংরক্ষিত বন, মণিপুরী পল্লী, শমসেরনগর বিমান বন্দর, ক্যামেলিয়া লেক, মণিপুরী ললিকলা একাডেমি, শমসেরনগর গলফ মাঠ; শ্রীমঙ্গল উপজেলায় লাসুবন গিরিখাত, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, বিদ্যাবিল হাজং টিলা, মুর্দাকুল মিনি ঝরণা, অফিং হিল, ডিনস্টন সিমেট্রি, নির্মাই শীববাড়ি, কালাছড়া সংরক্ষিত বন, নিরালা পান পুঞ্জি, রাবার বাগান, চাউতলী বনাঞ্চল, ভাড়াউড়া লেক, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, চা কন্যা ভাস্কর্য, চা যাদুঘর, লেবু-আনারস বাগান, লালমাটি কালীটিলা, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, পাহাড়-টিলা, বধ্যভূমি একাত্তর, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, শংকর টিলা লেক, জাগছড়া লেক, ফুলছড়া গারো লাইনের লেক; কুলাউড়া উপজেলায় হাকালুকি হাওর, পৃথিমপাশা নবাব বাড়ি, কালাপাহাড়; রাজনগর উপজেলায় কমলা রাণীর দীঘি, পাখিবাড়ি, রাজা সুবিদ নারায়নের রাজবাড়ি, জনার্দন কর্মকারের বাড়ি, জমিদার বাড়ি, লীলা নাগের পৈত্রিক বাড়ি, পাঁচগাঁও লাল দুর্গা মন্দির; জুড়ী উপজেলায় কমলা বাগান, লাটিঠিলা বনাঞ্চল; মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, হয়রত শাহ মোস্তফা (রহ.) মাজার শরীফ, মনু ব্যারেজ, কাসিমপুর পাম্প হাউস, ঐতিহাসিক খোজার মসজিদ, শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা গোল চত্ত¡র, বড়লেখা উপজেলায় মাধককুন্ড জলপ্রপাত, পরীকুন্ড জলপ্রপাত, সুজানগর আগর কারখানা, মুরইছড়া বনাঞ্চল, আগর বাগান, পাথারিয়া বনাঞ্চলসহ শতাধিক মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতি বছর ঈদেই বিপুল সংখ্যক ভ্রমণ পিপাসুদের পর্যটকদের সমাগম হয় মৌলভীবাজারে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত মৌলভীবাজারের পর্যটন স্পট ও আবাসন ব্যবসায়ীরা। 

শ্রীমঙ্গলের ডলুবাড়ি ত্রিপুরা পল্লী এলাকায় অবস্থিত অপরূপ সৌন্দর্যময় লেমন গার্ডেন রিসোর্টের সত্ত¡াধিকারী মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রায় সব রিসোর্ট, মোটেল, কটেজেই আগাম বুকিং সম্পন্ন। আমাদের লেমন গার্ডেন রিসোর্টে ৮ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত প্রায় সব রুমই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদে আমাদের এখানে আগত পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আমরা সব ধরণের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি। শ্রীমঙ্গলের সুনাম যেন অক্ষুন্ন থাকে সে লক্ষ্যে আমরা উন্নত সেবা দিয়ে প্রস্তুত রয়েছি।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলার পর্যটন গ্রাম হিসেবে পরিচিত উপজেলার রাধানগরে অবস্থিত শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্টের সত্ত¡াধিকারী তানভিরুল আরেফিন লিংকন বলেন, ‘এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকায় আমাদের রিসোর্টের শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর আমরা অনেকটা ফাকা বসে ছিলাম। অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি সে সময়ে। এবারের ঈদুল আজহায় সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। আমরা এবার পর্যটক বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি।’

বালিশিরা রিসোর্ট এবং নভেম ইকো রিসোর্টের পরিচালক প্রকৌশলী শরীফ মাহমুদ বলেন, ‘এবারের ঈদের ছুটিতে ৬ জুন থেকে ১৪ জুন আমাদের দুই রিসোর্টের কোন কক্ষ খালি নেই। সব কক্ষই ইতোমধ্যে বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমাদের প্রস্তুতি চলছে ঈদে আগত পর্যটকদের মানসম¥ত সেবা প্রদানের।’

কমলগঞ্জ উপজেলার টিলাগাঁও ইকো ভিলেজের ব্যবস্থাপক জারিদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ইকো ভিলেজের কোন কক্ষ ঈদের ছুটিতে খালি নেই। শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে।’ 

রাধানগর পর্যটন কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক কাজী সামছুল হক বলেন, ‘ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটন খাতে ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করবেন বলে আমি আশাবাদী। ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজার জেলায় পর্যটকদের আগমনের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার দাবি করছি। ঈদে বিশেষ ট্রেন চালু করা গেলে আরো বিপুল সংখ্যক পর্যটকের পাদভরে মুখরিত হতো এ অঞ্চল।’

পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, ‘এবারের ঈদের ছুটি ১০ দিন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসছেন জেলায়। দেশের বিভিন্ন স্থান ও জেলার ভ্রমণকারী মিলিয়ে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ছুটির ১০ দিনে কমপক্ষ্যে লক্ষাধিক ভ্রমণকারী প্রত্যাশা করছি। এবারের ঈদের ছুটিতে লোকে লোকারণ্য হবে শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ পুরো মৌলভীবাজার জেলা।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও রামনগর মণিপুরি পাড়ায় অবস্থিত গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের সত্ত¡াাধিকারী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘এবারের ঈদে শ্রীমঙ্গলের কটেজ, মোটেল, রিসোর্টগুলোর অধিকাংশই শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। আশা করছি ঈদের দীর্ঘ এই ছুটিতে চায়ের রাজ্যে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি অনেক দীর্ঘ। এ ছুটিতে এবার পুরো জেলায় প্রচুর পর্যটক আসবেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা পর্যটন সংশ্লিষ্ট

ব্যক্তিদের সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে সভা করাসহ আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিরবিচ্ছিন্ন ভ্রমণের লক্ষ্যে জেলার বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি পর্যটন স্পট নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। আমাদের সহযোগিতা করবেন শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ

থানার পুলিশ, র‌্যাব। আগত পর্যটকদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।’