Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ও সিলেট বিভাগের তত্ত¡াবধায়ক প্রীতম দাসকে তার নিজ জেলা মৌলভীবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ ছাত্র-জনতা। শুক্রবার (২০ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কোর্ট রোডস্থ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দাবি করেন প্রীতম দাস মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগকে পূর্ণবাসন করছেন। এজন্য তারা তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। এদিকে শনিবার (২১ জুন) গঠিত ওই কমিটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ‘এক দুই তিন চার, প্রীতম তুই গাদ্দার’, ‘প্রীতম তুই স্বৈরাচার, এক দুই তিন চার’, ‘পাঁচ ছয় সাত আট, প্রীতম তুই বয়কট’, ‘বয়কট বয়কট, প্রীতম দাস বয়কট’, ‘সান্ডা না প্রীতম, সান্ডা সান্ডা’, ‘মৌলভীবাজারের মাটিতে, প্রীতমের ঠাঁই নেই’ ইত্যাদি ¯েøাগান দেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন জাবেদ রহমান, শাহ উসমান আলী জাকি, রাজমিন জেনি, মাসনুন আলামিন, রাজন ভূইয়া, মামুন রহমান রাজু, ফাহিম আহমদ জনি প্রমুখ।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী জাবেদ রহমান বলেন, ‘আপনারা জানেন গত দুই দিন আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এইা কমিটিতে বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগ করেছেন তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যারা আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িত ছিল তাদের কমিটিতে মূল্যায়ণ করা হয়নি। একটা পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পন্থীদের কমিটিতে আনা হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাস দাদা জেলার নেতা-কর্মীদের কারো সাথে পরামর্শ না করে নিজেই স্বৈরাতান্ত্রিকভাবে কমিটিটা দিয়ে দিয়েছেন। তাই আমরা প্রীতম দাসকে মৌলভীবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। সে সাথে আমরা বলতে চাই আওয়ামী পুর্ণবাসনের এই কমিটি আমরা মানি না। দ্রæততম সময়ের মধ্যে কমিটি বাতিল ঘোষণা করে প্রকৃত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালনকারীদের নিয়ে কমিটি গঠনের জোর দাবি জানাই।’
রুহুল আমীন বলেন, ‘গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে যারা সক্রিয় ছিলেন, কাজ করেছেন, শ্রম দিয়েছেন তাদের সাথে কোন ধরণের পরামর্শ না করে প্রীতম দাস জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে খালেদ হাসানকে দেওয়া হয়েছে। সে আওয়মী লীগের দালাল। তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলাফেরা, আওয়ামী লীগের অর্থায়নে সে এই কমিটিতে প্রীতম দাসের মাধ্যমে জায়গা পেয়েছে। এছাড়া কমিটিতে আওয়ামী লীগের আরেক দালাল ইসকনের সদস্য প্রলয় বিশ্বাসকে স্থান দেওয়া হয়েছে। আরও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মীও কমিটিতে রয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রীতম দাস আওয়ামী লীগ এবং ইসকনকে পুনর্বাসন করছেন। আমরা তার এই হীন প্রচেষ্টার প্রতিবাদ জানাই।’
এ ব্যাপারে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সাথে আলাপকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাস বলেন, ‘যে দুই জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা হয়েছে তারা আওয়ামী লীগের কোন পদপদবীতে ছিলেন বা সক্রিয়ভাবে আওয়ামী রাজনীতি করেছেন বলে আমার জানা নেই। স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজনদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছিল। যেহেতু কমিটি নিয়ে অভিযোগ আনয়ণ করা হয়েছে সেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে ওই কমিটি আপাতত বাতিল করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ১৮ জুন রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের যৌথ স্বাক্ষরে অনুমোদন দেওয়া কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয় খালেদ হাসানকে। জেলা সমন্বয়ক কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারীর দায়িত্ব ফাহাদ আলম, এহসান জাকারিয়া, ইকবাল হোসেন, রুমন কবির, শামায়েল রহমান, নিলয় রশিদ, সানাউল ইসলাম, শাহ মিসবাহ ও সৌমিত্র দেবকে। আর সদস্য করা হয় কৌশিক দে, জাহাঙ্গীর আলম, ভীমপল সিনহা, রাসেল থিংগুজাম, জায়েদ আহমদ, সুমি চৌধুরী, প্রলয় বিশ্বাস, আব্দুল বারী খোবায়েব, বৈশিষ্ট্য গোয়ালা, তামিম আহমেদ, আবু সুফিয়ান, সৈয়দ মুফলেউস সালেকিন, সাফওয়ান চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, লিংকন তালুকদার, জুবায়েল আহমদ, নিজাম উদ্দিন, আশরাফ আহমদ, মোহাম্মদ মেরাজ চৌধুরী, হিরাজ আলী শাহ ও হোসাইন আহমদকে।