lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
Last Updated 2025-06-23T12:55:28Z
ব্রেকিং নিউজ

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের এককালীন ৬ হাজার টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে ওঠেছে দুই মাইক্রো মার্চেন্টের বিরুদ্ধে। চা-শ্রমিকদের এককালীন ৬ হাজার টাকা বিতরণে তারা সার্ভিস চার্জের নামে ২০০ ও ১০০ টাকা কেটে রাখছেন বলে স্থানীদের অভিযোগ। অভিযুক্ত দুই মার্চেন্ট হলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শ্রীমঙ্গল উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি আশিষ কর্মকার ও অপূর্ব তাঁতী। 

জানা যায়, সমাজসেবা অধিদফর কর্তৃক বাস্তবায়িত চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এককালীন জনপ্রতি চা-শ্রমিককে ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। উক্ত টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে উপকারভোগীদের হাতে প্রদান করার কথা। কিন্তু গত শনিবার ও রবিবার ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়নের ব্যাংক এশিয়ার মাইক্রো মার্চেন্ট নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা আশিষ কর্মকার এবং অপূর্ব তাঁতী উপকারভোগীদের হাতে বরাদ্দের পুরো টাকা না দিয়ে সার্ভিস চার্জের নামে নিয়মবর্হিভূতভাবে জনপ্রতি ২০০ এবং ১০০ টাকা কম করে প্রদান করেছেন। কালিঘাট ইউনিয়নে মোট ৬৪২ জন শ্রমিকের জন্য জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে মোট ৩৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। 

রবিবার (২২ জুন) বিকেলে সরজমিনে কালিঘাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বটগাঠ চৌমুহনী এলাকায় অবস্থিত ব্যাংক এশিয়ার মাইক্রো মার্চেন্ট অপূর্ব তাঁতীর দোকানের ভেতরে ও বাইরে শতাধিক চা শ্রমিক অবস্থান করছেন। ওই চা শ্রমিকরা জানান, তারা ওইদিন সকালে, কেউ কেউ আগের দিন আঙ্গুলের ছাপ দিলেও টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। এজেন্টের কাছে টাকা না থাকায় এ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে যারা টাকা পেয়েছেন তারা পেয়েছেন ৫৯০০ টাকা করে। বাকি ১০০ টাকা সার্ভিস চার্জের নামে কেটে রেখেছেন এজেন্ট। প্রতি বরাদ্দের সময়ই এমন ঘটনা ঘটে। 

অপর এজেন্ট আশিষ কর্মকারের দোকান বাগানের ১০ নম্ব লাইনের জগন্নাথ মন্দির এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এককালীন ৬ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য দোকানের ভেতরে এবং বাইরে প্রচুর নারী-পুরুষ চা শ্রমিক দাঁড়িয়ে আছেন। আলাপকালে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, মাইক্রো মার্চেন্ট আশিষ কর্মকার প্রত্যেক চা শ্রমিকের কাছ থেকে ২০০ টাকা খরচের কথা বলে ৫ হাজার ৮শত টাকা করে দিচ্ছেন। 

এ ব্যাপারে উপকারভোগী দুখনী তাঁতী বলেন, ‘আমি সরকারের উপকারভোগী হিসেবে ৬ হাজার টাকা পাবার কথা। কিন্তু আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা কেটে নিয়েছে এজেন্ট আশিষ কর্মকার।’

বাণী তাঁতী বলেন, ‘এজেন্ট অপূর্ব তাঁতী আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা কেটে রেখেছে।’

সুনীল পাল বলেন, ‘এজেন্ট আশিষ কর্মকার আমাকে ৬ হাজার টাকায় ২০০ টাকা কম দিয়েছে। কেন কম দিয়েছে তা বলছে না।

পরমেশ্বরী কর্মকার বলেন, ‘আমাকে ৫ হাজার ৮০০ টাকা দিয়েছে। বাকি ২০০ টাকা কেটে রেখেছে। প্রতিবার টাকা পাবার সময়ই এ ধরণের কাজ করছেন এজেন্ট।’ 

অভিযোগের ব্যাপারে কালিঘাট ইউনিয়নের মাইক্রো মার্চেন্ট আশিষ কর্মকার বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা তুলতে আমি ৫২ টাকা চার্জ রাখি। আর শহরে রাখে ১৫০ টাকা। এখন যদি চা-শ্রমিকরা শহরে গিয়ে টাকা আনেন তবে আরও ১৫০ টাকা খরচ হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু টাকা রাখি। এতে কেউ তো কোন কিছু  বলেন না। উনারা যদি শহর থেকে গিয়ে ১৫০ টাকা দিয়ে আনে তাহলে উনারাই বলুক শহর থেকে আনা বেনিফিট, না আমাদের এখান থেকে নেয়া বেনিফিট।’

অপর এজেন্ট অপূর্ব তাঁতীর ভাই তপু তাঁতী বলেন, ‘আমার ভাই হলেন এজেন্ট। তিনি টাকা আনতে শহরে গেছেন। আমাদের কাছে সকাল থেকে টাকা নাই, তাই শ্রমিকদের দিতে পারছি না। ১০০ টাকা কেটে রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, সামান্য সার্ভিস চার্জ রাখা হয়।’ 

এ ব্যাপারে ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা বলেন, ‘৬ হাজার টাকা প্রদানে সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা বা অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া আঙ্গুলের ছাপসহ বায়োমেট্রিক সব প্রক্রিয়া শেষ করেও টাকার জন্য এজেন্টের পেছনে ঘুরাঘুরি বিয়য়টা মেনে নেওয়ার মতো না। এ বিষয়টি আমি এখনই দেখছি।’ 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোয়েব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট-বড় ৪২টি চা বাগানের ১০ হাজার ৬৫০ জন চা-শ্রমিককে তাদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার টাকা করে এককালীন বছরে ৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এ টাকাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চা-শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। কালিঘাট ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের এককালীন টাকা তুলতে কেউ হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীদের সরাসরি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলবেন।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি এখন জানলাম। খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যাংক এজেন্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও আমরা মির্জাপুর ইউনিয়নে উদ্যোক্তা ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টসহ ২ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অনিয়মে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’