lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
Last Updated 2025-06-24T13:29:16Z
আইন ও অপরাধ

বরগুনায় প্রবাসীর পরিবারকে হুমকি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে ভাঙচুরের অভিযোগ

Advertisement


 


বরগুনা প্রতিনিধি: 

বরগুনা সদর উপজেলার ফুল ঢলুয়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশী পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কায়দায় হুমকি ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন ঢলুয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ নূর এর ছেলে জর্ডান প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।


স্থানীয়রা জানান, পূর্বে অনেক বছর যাবৎ মনিরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা ওই জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। আমরা এমনটাই দেখে আসছি। তবে এখন দেখছি জমিটি রাস্তার পাশে থাকায়, এবং পরিবারে বসবারত সক্ষম মানুষ না থাকায় এই জমি নিয়ে অনেকেই ঝামেলা সৃষ্টি করে দখলের চেষ্টা করতেছে। এটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ যোগ্য বলে আমরা মনে করি।


স্থানীয়রা আরো জানান, জমি সংক্রান্ত এই বিরোধে উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে এবং উভয় পক্ষ যেন ন্যায়বিচার পায়। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। 


প্রবাসী মনিরের বাবা বলেন, এ বছরের গত ১৩ জুন শুক্রবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে স্থানীয় প্রতিবেশী মৃত্যু রশীদ আকন এর ছেলে মো. আলমগীর (৫২) ও আলমগীর এর স্ত্রী খাদিজা (৩০) গংরা গত ১৩ জুন শুক্রবার রাত দুইটার সময় ভাড়াটিয়া গুন্ডাপান্ডা নিয়ে আমার বসতঘরের সামনে আমার জমিতে বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে গাছপালা কেটে নেয় এবং ঘরে থাকা আমি, আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে কে খুন- জখমের হুমকি দেয়। পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে দেশীয় অস্ত্র সহ তাদের হাতেনাতে ধরে।  আমি বৃদ্ধ মানুষ প্রতিবাদও করতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে আমি সঠিক বিচার দ্বাবি করছি। 


প্রবাসী মনিরুল ইসলাম এর মা মোসা. লাইলী বেগম বলেন, জমিটি নিয়ে বরগুনা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে (মামলা নং: ১৭১/২৪)। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞাও জারি রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই প্রতিপক্ষরা উক্ত ঘটনায় লিপ্ত হয়েছে।


ঘটনার পরদিন ১৬ জুন আমি বাদী হয়ে বরগুনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করি। আদালতে প্রাথমিক শুনানি শেষে বরগুনা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।


প্রবাসী মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের ৬ জন সদস্য জর্ডানে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বাড়িতে বারবার হুমকি-ধামকি, দেয়াল ভাঙা ও গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় আমার পরিবারটি চরম আতঙ্কে রয়েছে। এ অবস্থায় আমার বিদেশে মনোযোগ দিয়ে কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না। আমি প্রশাসন সহ সকলের কাছে ন্যায্য বিচার চাচ্ছি। 


এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রতিবেশী মোঃ সেন্টু মিয়া বলেন, "আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, মোহাম্মদ এ জমি ভোগদখল করে আসছেন। হঠাৎ করে খাদিজা ও তার লোকজন এসে জমিটি নিজেদের দাবি করে রাতের আঁধারে সেখানে ঘর তুলে দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলে তারা লোকজনসহ স্থান ত্যাগ করে। আসলে খাদিজা ও তার লোকজন কী ধরনের কাগজপত্রের ভিত্তিতে জমিটির মালিকানা দাবি করছেন, তা আমাদের জানা নেই।"


অন্য এক প্রতিবেশী মসজিদের ইমাম সাহেব রুহুল আমিন বলেন, "দীর্ঘ বছর ধরে আমরা মোহাম্মদকে এই জমি ভোগদখল করতে দেখছি। হঠাৎ করে রাতের অন্ধকারে কিছু লোক এসে জমির দখল নিতে চেষ্টা করে এবং দাবি করে যে এটি তাদের সম্পত্তি। তবে তারা কীভাবে এই জমির মালিকানা দাবি করছেন, তা আমাদের জানা নেই। শুনেছি, একটি জমির একাধিক দাগ থাকতে পারে এবং তারা সম্ভবত ওয়ারিশ হিসেবে জমির দাবি করছেন।"


এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি মোঃ জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, এই জমির ওপর আদালতের ইস্ট অর্ডার রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে একাধিকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাদিজা জমি দাবি করলেও, স্থানীয় সালিশকারীরা তাদের জমির কোনো বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় জমির দখল তাদের হাতে দেওয়া সম্ভব হয়নি। একটি জমির একাধিক দাগ থাকতে পারে এবং বিভিন্ন অংশীদাররা সেই জমি ক্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন। হঠাৎ করে রাস্তার পাশে মোহাম্মদের জমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, রাতের অন্ধকারে ওই জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করা হয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।


এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতিবেশী মোসাঃ খাদিজা বেগম বলেন, এই জমির বৈধ মালিক আমরা প্রমাণস্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের কাছেই রয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে ছাত্রদের নিয়ে এসে জমিতে ঘর উত্তোলন করি। কিন্তু প্রতিপক্ষ আমাদের নির্মিত ঘর ভেঙে চুরমার করে দেয়। আমরা এ ঘটনার সঠিক ও ন্যায়সংগত বিচার চাই।


বরগুনা সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইনুস আলী ফরাজী বলেন, ৯৯৯ নম্বরে ফোনের মাধ্যমে প্রবাসীর জমিতে রাতের আঁধারে দখলচেষ্টার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দখলকারীরা পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। তবে তাদের দাবি, জমিটি তাদের মালিকানাধীন, তাই তারা সেখানে বসতঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—যদি আদালতের রায় তাদের পক্ষে থেকেই থাকে, তবে কেন তারা রাতের আঁধারে গোপনে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করলেন?


তিনি আরও জানান, ঘটনার পরদিন তিনি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব যদি থানায় অর্পণ করা হয়, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।