lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
Last Updated 2023-03-27T12:59:50Z
জেলার সংবাদ

ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী কাটাগড় মেলা

Advertisement

 

সৈয়দ তারেক মো.আব্দুল্লাহ্ :

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামের ধর্মীয় সাধক দেওয়ান শাগের শাহে্র (রহ.) মাজারের বার্ষিক ওরশ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রায় ৫০০বছর পূর্বে দেওয়ান শাগের শাহ্ (রহঃ) পরলোকগমন করেন। তিনি বড় আওলিয়া ছিলেন।

প্রায় ২০০বছর ধরে বাংলা সনের ১২ চৈত্র শাগের শাহে্র মৃত্যু বার্ষিকীতে ওরসের পাশাপাশি বসে এই মেলা। মেলায় মাজারের ভক্ত নারী পুরুষ ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে কয়েক লাখ লোকের আনাগোনা হয়।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তার ব্যতীক্রম ঘটেনি। লাখ লাখ লোকের আনাগোনায় মেলা তার পরিপূর্ণতা লাভ করে।

ঐতিহাসিকের মতে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কাটাগড় নামক এলাকায় আসেন দেওয়ান শাগের শাহ্।  তিনি ছিলেন একজন সাধক।ধারনা করা হয় ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। ১৮ শতকের প্রথমদিকে ইহধাম ত্যাগ করেন এই আধ্যাত্মিক সাধক,তাঁর ইহধাম ত্যাগের দিন ভক্তকুল জড়ো হতে থাকে ও তাঁর স্মরণে উরশ শরীফের আয়োজন করে। কালক্রমে উরশ ঘিরে জমে উঠে এ মেলা। আধ্যাত্মিক সাধক শাগের দেওয়ান এর শাহ মাজারে ওরসকে ঘিরে প্রতি বছর বাংলা ১১, ১২,১৩, চৈত্র থেকে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলায় এক সময় ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা হলেও কালের পরিক্রমায় এখন হয় না। 

শুরু হওয়া তিনদিনের এই আয়োজন ১৫ চৈত্র শেষ হলেও এর রেশ থাকবে ১৫ দিনব্যাপি।ফার্নিচার মেলা চলে প্রায় মাসব্যাপি।

আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগের শাহ এর মাজারে ওরস উপলক্ষে গত শনিবার  থেকে এ মেলা শুরু হয়। ১৫ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এ মেলায় রকমারি পণ্য, নানা প্রজাতি আর হাতের কারুকাজ বিভিন্ন ধরনের পালঙ্ক, বাহারী ফার্নিচার দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ছে। মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে মেলায় বসা মিষ্টির দোকান ।

মেলা উপলক্ষে মাজারের পাশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একর এলাকায় কয়েক হাজার দোকান। এছাড়া দোকানের মধ্যে রয়েছে, ফার্নিচার, মিষ্টির ও খেলনার দোকান রয়েছে। পাওয়া যায় সাঁজ বাতাসা, তালের পাখা, মাটি, লোহা ও বাঁশের তৈরি নানাপদের গৃহস্থালি সামগ্রী, থাকে চুড়ি-ফিতা, শরবত, খেলনা,ফাস্ট ফুড,  ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, গার্মেন্টস পোশাক, নাগরদোলা,মোটরসাইকেল শো, থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের খাট।মেলার ঐতিহ্য সাঁজ,বাতাসা  রসগোল্লা,ও আমিত্তি

নিজেদের বাড়ীর পাশাপাশি আআত্মীয়স্বজনদের বাড়ীতে ঐতিহ্য অনুযায়ী মিষ্টি পাঠানো হয়।

 তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানিক মেলা হলেও মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই চালু হয়ে মেলা চলে প্রায় ১৫ দিনব্যাপী।

মেলার প্রধান আকর্ষন বালিশ মিষ্টি প্রতি পিছ ১ হাজার টাকা ওজন ৪ কেজি,  মাঝারী ২ কেজি ওজনের প্রতি পিছ ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে রাজৈর উপজেলার মাদারীপুর থেকে আগত  নিউ রাজ মিষ্টান্ন ভান্ডারে।পাশাপাশি অন্যান্য মিষ্টির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। 

মিষ্টি দোকানী রবিন্দনাথ হালদার বলেন গত বছর ৫ লক্ষ টাকার মিষ্টি বিক্রি হয় এবারও আশা করছেন এমনটাই বিক্রি হবে।

মেলার সময় কাটাগড় গ্রামসহ আশপাশের কলিমাঝি, সূর্যোগ, সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, শেখর,বয়রা,বামনগাতি, ভাটপাড়া, মাইটকুমরা, গঙ্গানন্দপুর, ছত্রকান্দা, বন্ডপাশা, গ্রামে ঈদের আমেজ বিরাজ করে।

মেলা উপলক্ষে এসব গ্রামে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার রীতি চালু আছে। অন্য সময় না এলেও এই এলাকার বিবাহিত মেয়েদের মেলা উপলক্ষে বাপের বাড়ি বেড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে প্রতিটি পরিবারে। আর এ এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা যারা বাইরে থাকেন, তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আসার।

প্রবাসী যারা এই এলাকায় থাকেন তাঁরা মেলা উপলক্ষে ছুটিতে অনেকেই বাড়ী চলে আসেন।

মাইটকোমরা গ্রামের উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সিদ্দীক খান বলেন, ‘জন্মের পর থেকে কাটাগড়ের মেলার নাম শুনতেছি। বাপ-দাদার হাত ধরে মেলায় যাওয়া শুরু। আমার এখন বয়স ৫৫। এ মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। বিভিন্ন স্থান থেকে আরও তিনদিন আগে থেকে আত্মীয়-স্বজন হাজির হয়েছেন'চারিদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

কাটাগড় মেলা কমিটির সদস্য,সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো.মিন্টু মোল্যা বলেন রমজানের ভিতর মেলা হওয়ায়  এবার মেলায় অনেক কিছুই রাখা হয়নি তবে ঐতিহ্যবাহী এ মেলার জন্য সারাবছর এই এলাকাসহ আশে পাশের গ্রামের মানুষ অধীর 

আগ্রহে থাকে।উৎসবমুখর পরিবেশে মেলা চলছে।

কাটাগড় মেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আজম বাবু মিয়া বলেন, ‘এটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী মেলা। মেলার শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। মেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমিটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।’

মেলায় কোন অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

আলফাডাঙ্গা সরকারি  কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহিদুল হক বলেন, ‘কাটাগড়ের মেলা এই এলাকার ঐতিহ্য। মেলাকে ঘিরে আশপাশের প্রায় ৫০ গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। এ মেলার সাজ-বাতাসা প্রায় ঘরে বছরভর থাকে, যা এলাকার একটি পুরনো ঐতিহ্য। বিভন্ন গ্রামের অনেক মানুষ ঈদ বা পূজাতে বাড়ি না এলেও মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন ‘কাটাগড় মেলা একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা বহু বছর থেকে এই মেলা হয়ে আসছে, মেলা অনুমোদন দেন জেলা প্রশাসক মহোদয়, মেলা কমিটি ডিসি অফিসের একটি কাগজ দেখিয়েছেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় এসপি মহোদয়কে তদন্তের জন্য বলেছেন, সহসাই অনুমোদন হয়ে যাবে। মেলায় কোন অনিয়ম হলে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করবে।