শুক্রবার 11 জুলাই 2025

lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ৮ মার্চ, ২০২৩
Last Updated 2023-03-08T12:42:14Z
আইন ও আদালত

সিলেট দক্ষিণ সুরমা থানায় চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকান্ড মামলার বাদী‘ই যখন আসামী

Advertisement

 

বিষু দেবনাথ-সিলেট মহানগর প্রতিনিধি:

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের দক্ষিণ সুরমা থানার চৌকশ পুলিশ টিম অভিযান পরিচালনা করে দক্ষিণ সুরমা থানার চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ০৩(তিন) জনকে গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার করেছে।

 উল্লেখ্য যে, গত ২০/০২/২০২৩খ্রিঃ সকাল ১০:৪০ ঘটিকার সময় থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, দক্ষিণ সুরমা থানাধীন বরইকান্দি ২নং রোডের মাথায় বশর অটো রাইস মিলের সামনে সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে রাস্তার ঢালে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি লাশ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাতনামা পুরুষ (৩৫) এর লাশটি উদ্ধার করে। মৃত দেহটি বস্তাবন্দি ও হাত-পা রশি দ্বারা বাঁধা অবস্থায় ছিল এবং সমস্ত মাথা হালকা সবুজ রংয়ের হাফ হাতা গেঞ্জি ও পলিথিন দ্বারা মুড়ানো অবস্থায় ছিল।

তবে প্রাথমিকভাবে লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। ঘটনাস্থলে পিবিআই, সিআইডি সহ বিভিন্ন ইউনিট কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালানো হয়। থানার এসআই(নিঃ)/মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন কর্তৃক অজ্ঞাতনামা লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত কালে মৃতের মাথার ডান দিকে পিছনের অংশে অনুমান ১ ইঞ্চি ধারালো অস্ত্রের কাটা রক্তাক্ত জখম, ডান চোখের উপরে কপালে ছিলা জখম, ডান চোখ নীলা-ফুলা জখম এবং বাম গালে অনুমান ৩ ইঞ্চি পরিমাণ রক্তাক্ত কাটা জখম পরিলক্ষিত হয়।

গত ২০/০২/২০২৩খ্রিঃ তারিখ বিকাল ০৩:৩০ ঘটিকার সময় অত্র মামলার বাদী মোঃ জাহাঙ্গীর আলী অনলাইনে স্যোসাল মিডিয়া ফেইসবুকে “ সিলেট প্লাস” নামক আইডিতে একটি বস্তাবন্দি লাশ প্রাপ্তির সংবাদ পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে থানার অফিসারের মোবাইল ফোনে লাশের ছবি দেখে বাদী তার ভাই মোঃ সাজ্জাদ আলীর মৃত দেহ মর্মে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করেন। পবরর্তীতে ডিজিস্ট এর ভাই মোঃ জাহাঙ্গীর আলী ও তার তালতো ভাই চেরাগ আলী সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে গিয়ে মোঃ সাজ্জাদ আলীর মৃত দেহ স্ব-চোখে দেখে সনাক্ত করে। তখন জানা যায়, মৃতের নাম মোঃ সাজ্জাদ আলী (৩৫), পিতা-মরহুম ছোয়াব আলী, সাং-বসন্তরাগাঁও, থানা-জালালাবাদ, জেলা-সিলেট।

পরবর্তীতে ডিজিস্ট এর ভাই মোঃ জাহাঙ্গীর আলী থানায় এসে বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে অত্র দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং-১২, তারিখ-২২/০২/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজ হয় । ঘটনার বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক-নিদের্শনায় একটি চৌকশ তদন্তকারী টিম গভীর তদন্তে নামে। এক পর্যায়ে সন্দিগ্ধ হিসেবে পুলিশ মো: সাহাজান (৩৯) কে গ্রেফতার করে ব্যাপক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন উল্লেখযোগ্য তথ্য না পাওয়ায় তদন্ত অন্য দিকে মোড় নেয়। পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসার জানতে পারেন যে, ডিজিস্ট অনুমান ৫ মাস পূর্বে দুবাই হইতে দেশে আসার পর হতে তার পরিবারের সাথে একত্রে বসবাস করলেও একই রান্না ঘরে পৃথক ভাবে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করতেন এবং বাড়ীর জায়গা-জমির ভাগ-বাটোয়ারার বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল।

একপর্যায়ে তদন্তকারী অফিসার ডিজিস্টের বসত বাড়ীতে ব্যাপক ভাবে অনুসন্ধান করেন। অনুসন্ধানকালে ডিজিস্ট এর শয়ন কক্ষে তার ব্যবহৃত কোন কাপড়-চোপড় দেখতে না পেয়ে তদন্তকারী অফিসারের জিজ্ঞাসাবাদে পরিবারের সদস্যগণ কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তখন তদন্তকারী অফিসারের সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয়।

অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় ঘরের ভিতরের সিঁড়ি দিয়ে ছাদের উপর উঠে দেখেন যে, ঘরের ছাদের লিন্টারের রডের সাথে নাইলনের রশির কাটা একাংশ বাঁধা এবং কাঁঠাল গাছের ডালের সাথে নাইলনের রশির আরেক কাটা অংশ বাঁধা। কিন্তু মাঝখানের নাইলনের রশিটি নাই। উক্ত নাইলনের রশির কাটা অংশ সমূহের রং ও আকৃতি ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ও জব্দকৃত ডিজিস্ট এর পা বাঁধায় ব্যবহৃত নাইলনের রশির রং ও আকৃতি একই রকম। এতে তদন্তকারী অফিসারের সন্দেহ আরো জোরালো হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী অফিসার ডিজিস্ট এর ভাই (অত্র মামলার বাদী) আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলীকে নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করাকালে সে তার ভাই ডিজিস্ট সাজ্জাদ আলী (৩৫) কে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি স্বেচ্ছায় স্বীকার করে।

 হত্যাকান্ডের পর উক্ত আসামী ঘরের বাহির হতে বস্তা এনে, ঘরে থাকা রশি এবং ছাদের উপর হতে কাপড় শুকানোর (হালকা খয়েরী ও হালকা সবুজ রংয়ের) রশি কেঁটে এনে ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে অজ্ঞাতনামা সিএনজি গাড়ী দিয়ে লাশ বহন করে দক্ষিণ সুরমা থানাধীন বরইকান্দি ২নং রোড এলাকাস্থ বশর অটো রাইস মিলের সামনে সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে রাস্তার ঢালে ফেলে দেয়। তৎপরবর্তী সময়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি দা বসন্তরাগাঁও গ্রামের কবর স্থানের ঝুপের মধ্যে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে আসামীর দেওয়া তথ্য মোতাবেক ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ও জব্দকৃত ডিজিস্ট এর পা বাঁধার কাজে ব্যবহৃত রশির অবশিস্টাংশ এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি দা আসামীর দেখানো ও সনাক্ত মতে উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলী (২৭) গত ০৭/০৩/২০২৩খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বর্তমানে আসামী জেল হাজতে আটক আছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উক্ত আসামীর সহিত জড়িত তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামী বা আসামীদের সঠিক নাম-ঠিকানা সংগ্রহ পূর্বক গ্রেফতারের লক্ষ্যে, ঘটনায় ব্যবহৃত অজ্ঞাতনামা সিএনজি গাড়ীর চালকের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ পূর্বক গ্রেফতার এবং সিএনজি গাড়ী উদ্ধারের লক্ষ্যে তদন্ত অব্যাহত আছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোহাঃ সোহেল রেজা পিপিএম এঁর নির্দেশণায় দক্ষিণ সুরমা থানার ০১টি চৌকশ পুলিশ টিম কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হয়। দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং-১২, তাং-২২/০২/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। 

গ্রেফতারকৃতদের নামঃ ১। মো: সাহাজান (৩৯), পিতা মৃত-ছিদ্দেক আলী, মাতা-আনোয়ার বেগম, সাং-রাজাপুর, থানা-লক্ষীপুর সদর, জেলা-লক্ষীপুর, বর্তমানে-খসরু মিয়ার কলোনী, খোজারখলা, ব্লক-ডি, ওয়ার্ড।