Advertisement
বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে শিশুর মধ্যে কৃমি একটি বহুল পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এই সমস্যা শিশুর পুষ্টিহীনতা, দুর্বলতা এবং পড়ালেখায় অমনোযোগিতার অন্যতম কারণ হতে পারে। যথাযথ সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে কৃমি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
কৃমির কারণসমূহ:
১. শিশু যদি খাওয়ার আগে বা পায়খানার পর হাত না ধোয়, তবে কৃমির ডিম তার হাতের মাধ্যমে মুখে প্রবেশ করতে পারে।
২. মাটিতে খেলা করার সময় বা নোংরা জায়গায় ঘোরাফেরা করলে শিশুর শরীরে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।
৩. অপরিষ্কার ও অঢাকা খাবার খেলে কৃমির ডিম দেহে প্রবেশ করতে পারে।
৪. দূষিত পানীয় জল পান করাও কৃমি হওয়ার একটি বড় কারণ।
৫. শিশুর নখ বড় থাকলে এবং তা পরিষ্কার না রাখলে, কৃমির ডিম সহজেই মুখে প্রবেশ করতে পারে।
কৃমির লক্ষণসমূহ:
১. শিশুর বারবার পেট ব্যথা হওয়া বা পেট ফাঁপা অনুভব করা।
২. খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া এবং খাদ্যে অনীহা।
৩. শিশু দুর্বল হয়ে পড়া, ওজন কমে যাওয়া বা খোশখোশে চেহারা হওয়া।
৪. রাতে দাঁত ঘষা, ঘুমে অস্থিরতা বা পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হওয়া।
৫. অনেক সময় শিশুর মলের সঙ্গে বা পায়খানার সময় কৃমি দেখা যেতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
১. সরকারিভাবে বছরে দুবার শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট (Albendazole) খাওয়ানো হয়। ১ বছর বা তার বেশি বয়সের সব শিশুদের এটি খাওয়ানো উচিত।
২. খাওয়ার আগে ও পায়খানার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৩. শিশুদের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নখ কামড়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
৪. সব খাবার ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
৫. শিশুদের পায়খানার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি শেখাতে হবে।
উপসংহার:
কৃমি একটি প্রতিরোধযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা। স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুললে এবং সময়মতো কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ালে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। শিশুর ভবিষ্যৎ সুস্থ ও শক্তিশালী করে তুলতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে আগ্রহী হতে হবে। আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদের কৃমিমুক্ত, সুস্থ ও সুন্দর জীবন।
লেখক:
নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ
ডাঃ মোঃ শাহিনুল ইসলাম
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু)
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
সালথা, ফরিদপুর।