Advertisement
বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলীতে থেমে নেই শ্রমিকলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। আওয়ামীলীগ আমলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েও এখনো রয়েছে বহাল তবিয়াতে।
অভিযোগ রয়েছে, আমতলী উপজেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আতাত করে চালিয়ে যাচ্ছে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় বরগুনার আমতলীতে হত্যা চেষ্টা মামলা তুলে না নিলে পরিবারকে এডিস মেরে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা ভীত সন্তুষ্ট। রবিবার আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন সোবাহান প্যাদা।
উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তত ১০ জন ব্যাক্তিকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়ার অভিযোগ থাকলেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মামলা করতে সাহস পায়নি। দ্রুত সন্ত্রাসী খোকন মৃধা ও তার বাহিনীদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট উপদেষ্টা, আইজিপি ও ডিআইজিকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সোবাহান প্যাদা ও তার পরিবার।
মামলা ও সংবাদ সম্মেলন সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার নাচনাপাড়া গ্রামের সোবাহান প্যাদার ৪ একর জমি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আমতলী উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগ সভাপতি বরগুনা জেলা যান্ত্রিক যান থ্রিহুইলার শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা গত বছর মার্চ মাসে দখল করে নেয়। শ্রমিকলীগ নেতা আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি সদর ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধার ছোট ভাই। গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার পতন হলে ওই জমি সোবাহান প্যাদা পুনরায় দখল করেন। এ জমি নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে গত ২১ মার্চ সোবাহান প্যাদার ছেলে মোটর সাইকেল চালক ছলেমান প্যাদাকে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে নাচনাপাড়া সড়কে রশি টানিয়ে মোটর সাইকেল থামিয়ে তুলে নেয়। পরে ওই এলাকার একটি কালভার্টের পাশে ফেলে জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য আনোয়ার মৃধা, বাবুল প্যাদা, শাহীন মৃধা, জুয়েল গাজী, আবু সালেহ খাঁন, লিমন গাজী ও মিরাজসহ ১৮-২০ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। সন্ত্রাসীরা তার দুই পা, দুই হাতের রগ কেটে ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৩০ টি কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করে। মৃত্যুভেবে তাকে সন্ত্রাসীরা কালভার্টের পাশে রেখে চলে যায়। পরে একই গ্রামের মোটর সাইকেল চালক মঞ্জু প্যাদা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। তাৎক্ষনিক ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সংঙ্কটজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা অর্থোপেটিক্স (পঙ্গু) হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। বর্তমানে ছলোমান ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছলেমানকে কুপিয়ে জখমের ঘটনার তার বাবা বাবা সোবাহান প্যাদা গত ২৭ মার্চ বাদী হয়ে জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধাকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আমতলী থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। সোবাহান প্যাদার অভিযোগ মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। শনিবার রাতে সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বাড়ী গিয়ে মামলা তুলে না নিলে তাকে ও পরিবারকে এসিড মেরে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। খোকন মৃধার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে সোবাহান প্যাদা ও তার পরিবার তার ভীত সন্তুষ্ট। অপর দিকে খোকন মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আহত ছলোমান প্যাদাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ছলেমানের অভিযোগ খোকন মৃধা তাকে হুমকি দিচ্ছে তোকেতো মেরেই ফেলেছিলাম কিন্তু ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলি। হয়ত মামলা তুলে নিবি নইলে এবার মেরে ফেলবো।
জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর একান্ত দোসর ছিল। আওয়ামীলী প্রভাবখাটিয়ে খোকন মৃধা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম, জমি দখল, মাদক ব্যবসা. চাঁদাবাজী ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে খোকন মৃধার মতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় অন্তত ১০ জনকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় এ সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করতে কেউ সাহস পায়নি। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলেও বহায় তবিয়তে রয়েছে জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা এমন আরো অভিযোগ আহত ছলেমানের। উপজেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আতাত করে তিনি বহাল তবিয়াতে সন্ত্রাসী কার্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নেই যা তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে রয়েছে এমন অভিযোগ সোবাহান প্যাদার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধার বিরুদ্ধে গেলেই তার ওপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তিনি তার প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেন। তার বিরুদ্ধে শতশত অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। তারা আরো বলেন, বর্তমানে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আতাত করে তিনি তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমতলী উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তবে আপনার বিরুদ্ধে কেন মামলা হলো এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।
আমতলী থানা ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, এ মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বরগুনা সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী) সার্কেল তারিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহিম খলিল বলেন, মামলার বাদিকে এসিড মেরে হত্যার হুমকি দিয়ে থাকলে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিবে। আমি থানার ওসিকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।