lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
Last Updated 2025-12-08T11:20:44Z
কৃষি

রুট পুলিং পদ্ধতিতে মাল্টা ও কমলা চাষে সফল পাবনার রতন মোল্লা

Advertisement


 

আলমগীর হুসাইন অর্থ:

পাবনার বিস্তৃর্ণ পদ্মার চরে বাণিজ্যিকভাবে দেশি জাতের মাল্টা'র চাষ করে সফলতার দেখা পেয়েছেন পাবনা সদর উপজেলার চর তারাপুর ইউনিয়নের শামীম হোসেন তুহিন। এবার পাবনার জমিতে অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত বিদেশী জাতের মাল্টা ও কমলার ব্যাপক উৎপাদন করে পাবনাবাসীকে  রীতিমতো তাক  লাগিয়ে দিয়েছেন দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন মোল্লা। পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নাধীন মতিগাছা গ্রামে ১০ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা মাল্টা- কমলার বাগান একদিকে যেমন স্থানীয়দের বিশুদ্ধ (কেমিক্যাল মুক্ত) ভিটামিন -সি জাতীয় ফলের চাহিদা পুরণ করছে। অপরদিকে তরুন যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তৈরী করছে। 


বাংলাদেশ নয় এযেন অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড! বাগানে প্রবেশ করতেই গাছে ঝুলতে থাকে টকটকে হলুদ রঙের মাল্টা ও কমলা দেখে মনে হতে পারে এমন প্রশ্ন। মতিগাছা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন মোল্লার মাল্টা ও কমলার এই বাগানে লক্ষ্য করা যায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়। চোখ মেললেই দেখা যায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর'দের সরব উপস্থিতি। 


সফল কৃষি উদ্যোক্তা রতন মোল্লা জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শখের বশবর্তী মাল্টা ও কমলার  বাগান শুরু করেন। প্রথমে ৪ বিঘা জমিতে ৪০০ টি মাল্টা ও কমলার চারা রোপন করি। বর্তমানে ১০ বিঘা জমির উপর নির্মিত মাল্টা ও কমলার বাগানে ৯০০ টির বেশি মাল্টা ও কমলার গাছ রয়েছে। গতবছর আমার বাগানের ফলন তেমন ভালো ছিল না। ঠাকুরগাঁও'র পীরগঞ্জের দেশবরেণ্য কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল ভাই এর পরামর্শে রুট পুলিং তথা শিকড় ছাঁটাই পদ্ধতি অবলম্বন করে টসটসে হলুদ কালার (বিদেশী)'র সুমিষ্ট  মাল্টা ও কমলার বাম্পার হয়েছে। আশা করছি এবছর ৩-৪'শ মণ মাল্টা ও কমলা বিক্রয় করতে পারবো। 


রতন মোল্লা বলেন,  বাগান প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৫-৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে।গতবছর কিছু ফল ধরেছিল। তবে এবছর যে পরিমাণ ফলন হয়েছে ইনশাল্লাহ খরচের টাকা উঠে যাবে, আগামী বছর থেকে লাভের মুখ দেখতে পারবো। আমি পীরগঞ্জে জুয়েল ভাই'র বাগানে দেখেছি ১৮ বছর বয়সী মাল্টা ও কমলার গাছেও ভালো উৎপাদন হয়।সেই হিসাবে আরও ১০-১২ বছর যদি বাগানে ফলন হয়, আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না ইনশাল্লাহ। 


তিনি আরও বলেন, দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের মাল্টা ও কমলা হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাগানে  দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারী ও খুচরা ক্রেতারা ভীড় জমাচ্ছে। প্রতি কেজি মাল্টা ২০০-২৫০ টাকা ও প্রতিকেজি কমলা ২৫০-৩০০ টাকা বিক্রয় করা হচ্ছে। একইসাথে বাগানে দর্শনার্থী'রা  আসছে, কনটেন্ট ক্রয়েটর'রা আসছে ভিডিও তৈরী করতে। 


বাগানের শ্রমিক'রা জানান, বছরজুড়ে সাধারণত ২-৩জন শ্রমিক এখানে কাজ করেন। বাগান পরিচর্যা, রক্ষনাবেক্ষন সহ বাগানে আসা ক্রেতাদের কাছে মাল্টা ও কমলা সংগ্রহ করে বিক্রয় করেন তারা।


মাল্টা ও কমলার বাগানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী'রা বলেন, পাবনা'য় এত সুন্দর মাল্টা ও কমলার বাগান সত্যিই বিস্ময়কর! ভিতরে আসলে  অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত ফিল পাওয়া যায়। এখানে এসে ছবি তুলছি ও ভিডিও করছি। 


বাগানে মাল্টা কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান,এখানকার মাল্টা অনেক সুস্বাদু। এছাড়াও কোন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যাল না থাকায় পরিবারের মাঝে বিশুদ্ধ ফল তুলে দিতে পারছি এজন্য রতন মোল্লা কে ধন্যবাদ।


এদিকে রতন মোল্লার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার বেকার সম্প্রদায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।এতে এলাকার  অর্থনীতি যেমন চাঙা হবে একইসাথে বেকার সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন অত্র এলাকার সচেতন মহল। 


পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ‘পূর্বে মাল্টার ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা বেশি ছিল। এখন আমাদের দেশে বানিজ্যিক ভাবে বারি -১ ও বারি -৫ জাতের মাল্টা চাষ হচ্ছে। ফলটি সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কৃষি  সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে  সার্বিক সহযোগিতার কথা জানান তিনি।