Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ১৩ নম্বর কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মুরইছড়া চা বাগানের স্কুল টিলা এলাকার বাসিন্দা চা-শ্রমিক সন্তান গোপাল সাওতাল। বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছরের মতো। যে বয়সে অন্য শিশুরা সর্বত্র দাপিয়ে বেড়ায়, সে বয়সে গোপাল প্রায় সারাদিনই দাঁড়িয়ে থাকে ঘরের মধ্যে একটি গর্তে। শিশুটির মা সনচড়ি সাওতাল একমাত্র ছেলেকে লালন-পালনের সুবিধার্থে ঘরের ভেতরে এমনভাবে একটি গর্ত খনন করেন যে, ছেলে গোপালকে সেখানে গর্তে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে পরিবারের কাজ সম্পন্ন করা থেকে শুরু করে ছেলেকে খাওয়ানোসহ অন্যান্য কাজ করতে পারেন। গর্তটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে গর্তে ঢুকানোর পর শিশু গোপালের মাথা ও দুই হাত গর্তের বাইরে থাকে। আর বুক পর্যন্ত পুরো শরীর গর্তের ভেতরে। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী গোপাল হাটতে, চলতে, দাঁড়াতে বা বসতে পারে না বলেই মায়ের এ অভিনব উদ্যোগ।
শনিবার (১৪ জুন) গোপালের এ বিষয়টি এবং একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়। বিষয়টি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর নির্দেশে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার প্রাণেশ চন্দ্র বর্মা রবিবার (১৫ জুন) সকালে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু গোপাল সাওতাল ও তার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেন এবং সরকারিভাবে শিশুটির প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা, রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত সমূদয় সহায়তা, মৌলভীবাজার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উপকরণ সরবরাহ করার আশ্বাস দেন। এ মাস থেকে শিশুটি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে বলে তার মা-বাবাকে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে শিশুটির বাবা মুরইছড়া চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক অনিল সাওতাল বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের একমাত্র ছেলেটি জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্থানীয়ভাবে অনেক চিকিৎসা করিয়েও সুফল পাইনি। পরে সিলেটের খাদিমনগরের একটি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাই তাকে। সেখানের চিকিৎসকরা বলেছিলেন নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিলেই তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়া সম্ভব। কিন্তু আমার পরিবারে আর্থিক টানাপোড়নের কারনে ব্যয়বহুল ফিজিওথেরাপি দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই তার মা বুদ্ধি করে এই গর্তটা করেছে। গর্তটিতে ঢুকালে আমাদের সন্তান দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এখন উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে আমাদের সন্তানের চিকিৎসা ও ভাতা প্রদান করার কথা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমাদের বলেছেন। আমরা খুবই খুশি। আমাদের একমাত্র সন্তান চিকিৎসা পেয়ে হাটাচলা করবে, দৌড়াবে সে স্বপ্ন দেখছি।’
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার স্যারের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু গোপাল সাওতালের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা খুব শিগগির করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’