lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
Last Updated 2025-06-16T09:23:54Z
আইন ও অপরাধ

কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক জুনেল গ্রেপ্তার

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যাকান্ডে জড়িত ঘাতক মো. জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত জুনেলের দেখানো মতে হত্যাকান্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা নিহতের পরিহিত বোরকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (১৬ জুন) দুুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সস্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম আপছার ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য।

জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের মেয়ে, স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা জান্নাত আনজুম গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ৭টায় পার্শ্ববর্তী সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে ওইদিনই পরিবারের পক্ষ থেকে কুলাউড়ায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। ঘটনাটি পুরো জেলায় বহুল আলোচিত হয়ে ওঠে। এর দুই দিন পর শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বাড়ির পাশে ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে স্কুলছাত্রী আনজুমের ভাই ও মামা তার অর্ধগলিত মরদেহ খুঁজে পান এবং পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। মরদেহ উদ্ধারের পর নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুলাউড়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলম আপসার, পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দ্রæততম সময়ের মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ মোট ছয়টি বিশেষ টিম গঠন করে আশেপাশের ব্যাপক তল্লাশী করে। এসময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে নিহতের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ওই ছয়টি বিশেষ টিম স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জায়গা এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে জুনেল মিয়াকে আটক করে। পরবর্তীতে তার ব্যবহৃত মোবাইল পরীক্ষা করে পর্ণ সাইটে ব্রাউজিংয়ের তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। পরবর্তীতে আমরা তাকে ওইদিন দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত একটানা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আটক জুনেল মিয়া হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জুনেল জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুলে ও প্রাইভেটে আসা যাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া স্কুল ছাত্রী আনজুমের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ঘটনার দিন গত ১২ জুন সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় স্কুল ছাত্রী আনজুম প্রাইভেট পড়া শেষে আসামীর বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে আসামী জুনেল আনজুমের তার পিছু নেয় এবং এক পর্যায়ে কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। আনজুম চিৎকার শুরু করলে আসামী জুনেল মিয়া তার গলায় চাপ দিয়ে ধরলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আসামী জুনেল তাকে মাজার সংলগ্ন জঙ্গলের পাশে ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে। পরে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে ফেলে দেয় এবং তার পরিহিত বোরকা নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারীর ভেতরে ফেলে দেয়। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে নিহতের সেই বোরখাটি উদ্ধার করে।